যে কারণে মৃত্যুর পর গার্ড অব অনার চান না মুক্তিযোদ্ধা অমূল্য কুমার রায়

|

বীর মুক্তিযোদ্ধা অমূল্য কুমার রায় ও তার ছেলে বিপুল চন্দ্র রায়।

লালমনিরহাট প্রতিনিধি:

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় অপমান করায় ও তার ছেলেকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়ে বেতন-ভাতা বন্ধ রাখার অভিযোগে মৃত্যুর পর গার্ড অব অনার না দেয়ার জন্য আবেদন করেছেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। অমূল্য কুমার রায় নামের এই মুক্তিযোদ্ধা গত ২৫ আগস্ট বিভিন্ন দফতরে লিখিত আবেদন জানালেও বিষয়টির কোনো সুরাহা এখনো করেনি প্রশাসন।


জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা অমূল্য কুমার রায়ের ছেলে বিপুল চন্দ্র হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম পুলিশে কর্মরত আছেন। প্রায় ২২ মাস আগে ওই এলাকার মৃত দেলোয়ারের ছেলে রবিউল ইসলামসহ আরও কয়েকজন ছিনতাইয়ের অভিযোগে বিপুল চন্দ্রকে গড্ডিমারী হাট থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। এ সময় খবর পেয়ে অমূল্য কুমার রায় সেখানে গেলে তাকেও হেনস্তা করে রবিউল ও তার সঙ্গীরা। পরে রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে ছিনতাইয়ের মিথ্যা মামলা দায়ের করে বিপুলকে থানায় দেন। পরে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বাচ্চুর হস্তক্ষেপে বিপুলকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসা হয়।

এদিকে, ওই অভিযোগের কোনো প্রমাণ না মিললেও গত ২২ মাস যাবত বিপুলের বেতন-ভাতা বন্ধ রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে অমূল্য কুমার রায় বলেন, আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমার ছেলে গ্রাম পুলিশের সদস্য। তার বেতন আর আমার ভাতা দিয়ে কোনো রকমে আমাদের সংসার চলতো। কিন্ত কোনো কারণ ছাড়াই আমার ছেলের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অভিযোগ দিয়ে তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করেছে রবিউল ও তার লোকজন। আমি সেখানে গেলে আমাকেও তারা হেনেস্তা করে। সেই থেকে আমার ছেলের বেতন বন্ধ। এই দূর্দিনে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে দিনপার করছে সে। কিন্ত এভাবে আর কত দিন? আমি বেঁচে থাকতে যদি সম্মান না পাই, তাহলে মরে গিয়ে পাওয়া সম্মান পেয়ে কি করবো? আমি আমার মৃত্যুর পরে গার্ড অফ অনার চাই না।

এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে বিপুল চন্দ্র বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে মামলা দেয়া হয়েছে। গত ২২ মাস থেকে আমি কোনো বেতন পাই না। কষ্টটা আমি বুঝি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ হওয়ার পরেও কেন আমার বেতন বন্ধ? আমিতো থানায় গিয়ে হাজিরা খাতায় নাম স্বাক্ষর করে এসেছি। বেতন ভাতা বন্ধের কোনো অফিসিয়াল নোটিশও আমি পাইনি। তাহলে বেতন বন্ধ কেন?

এ বিষয়ে হাতীবান্ধা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল জব্বার বলেন, আশা করি প্রশাসন অতি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করবে।

হাতীবান্ধা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সামিউল আমিন বলেন, তার আবেদন আমরা পেয়েছি। তদন্ত করছি, তদন্ত শেষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, এর আগে মৃত্যুর পর গার্ড অব অনার না দেয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়, লালমনিরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল, লালমনিরহাট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার, হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও হাতীবান্ধা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বরাবরে আবেদন করেন এ বীর মুক্তিযোদ্ধা।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply