কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
‘আগস্ট ইজ দি ক্রুয়েলেষ্ট মানথ, আগস্ট শোকের মাস, পাপ মগ্ন নির্মম নিষ্ঠুর। তাকে পাপ থেকে মুক্ত করো কান্নায় কান্নায়’ – জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার আগস্ট মাসকে নিয়ে কবি নির্মলেন্দু গুন কবিতা লিখেছেন ‘কাঁদো’। ১৫ আগস্ট কবির এই পঙক্তিমালা নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন কুড়িগ্রামের যুবলীগ কর্মী সেলিম। তার এই পোস্টে বঙ্গবন্ধুকে অবমাননার অভিযোগ তেলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন আরেক স্থানীয় যুবলীগ নেতা।
এ বিষয়ে গত ২৬ আগস্ট রৌমারী উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য জাইদুল ইসলাম মিনু বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর ২৫(ক)(খ)/৩১ ধারায় সেলিম মিয়ার বিরুদ্ধে রৌমারী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ বৃহস্পতিবার সেলিম মিয়াকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
কারাগারে যাওয়া ওই যুবলীগ কর্মী সেলিম মিয়া উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের খেতার চর গ্রামের মৃত আবুল হাসেম সরকারের ছেলে। তার বাবা প্রয়াত আবুল হাসেম সরকার দাঁতভাঙা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও প্রায় ১২ বছর ওই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন।
জানা গেছে, সেলিম মিয়া জাতীয় শোক দিবসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে তার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দেন। ওই পোস্টেও একটি অংশে ‘তাকে পাপ থেকে মুক্ত করো কান্নায় কান্নায়’ বাক্যাংশে ‘তাকে পাপ থেকে মুক্ত করো’ শব্দ গুচ্ছে বঙ্গবন্ধুকে ‘অবমাননা’ করা হয়েছে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন। পোস্টে এক মন্তব্য কারীর মন্তব্যের উত্তরে সেলিম মিয়া লেখেন, ‘জন্মের শিক্ষা হয়েছে মামা, পোস্টটি আমি নিজে করিনি। মোবাইল নিয়ে অন্য একজন করেছে, তারপরও আমি সরি’। এরপর সেলিম মিয়া নিজের ভুল বুঝতে পেরে পোস্টটি সরিয়ে নেন।
উপজেলা যুবলীগের সভাপতি হারুন অর রশীদ বলেন, সেলিম মিয়া আওয়ামীলীগ পরিবারের সন্তান এবং যুবলীগের কর্মী। বিগত নির্বাচনে সে আওয়ামীলীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছে। আলোচিত পোস্টটি সে নিজে করেনি বলে দাবি করেছে এবং সেটা তার অনিচ্ছাকৃত ভুল। কিন্তু তার বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়ে আমার সাধারণ সম্পাদক আমার সঙ্গে কোনো পরামর্শ করেননি বলেও জানান তিনি।
মামলার বাদী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য জাইদুল ইসলাম মিনু বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সংগঠনের প্রাতিষ্ঠানিক সুনাম ক্ষুণ্ণ করার লক্ষ্যে অশ্লীল, অশালীন, প্রোপাগান্ডামূলক কুরুচিপূর্ণ লেখনী, শব্দাবলী যুক্ত ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে মানহানিকর তথ্য প্রকাশ ও প্রচার করেছেন বিবাদী। যা সরকার ও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে আমার মনে হওয়ায় আমি বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেছি।
এছাড়াও তিনি আরও বলেন, সেলিম মিয়া যুবলীগের কোনও পর্যায়ের সদস্য নয়। আমার যুবলীগের ব্যানার ব্যবহার করে বঙ্গবন্ধুকে কটুক্তি করায় আমি থানায় মামলা করেছি।
এবিষয়ে রৌমারী থানার ওসি মোন্তাছের বিল্লাহ বলেন, বাদীর মামলার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পাবলিক প্রসিকিউটর এসএম আব্রাহাম লিংকন বলেন, কবিতার উক্তি ভালো ভাবে না পড়ে এ ধরনের মামলা করা অজ্ঞতার সামিল। কবি তার কবিতায় ১৫ আগস্টকে অভিশপ্ত মাস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পুরো কবিতায় কবি আগস্টের শোককেই তুলে ধরেছেন। এ ধরনের মামলার ক্ষেত্রে বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তার আরও সতর্ক হওয়া উচিৎ ছিল। এই কবিতার উক্তি দিয়ে যদি মামলা হয়, তাহলে প্রথম অভিযুক্ত হবেন কবি। এই কবিতায় বরং আগস্টের অপরাধীদের কথা বলা হয়েছে।
Leave a reply