পালাতে গিয়ে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হাতে আটক ই-অরেঞ্জের কথিত পৃষ্ঠপোষক ও বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সোহেল রানার সম্পদের পরিমাণ প্রকাশ পেয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ই-অরেঞ্জের মূল পরিকল্পনাকারী পুলিশ কর্মকর্তা শেখ সোহেল রানা বর্তমানে গুলশান জোনের বনানী থানায় পরিদর্শক হিসাবে কর্মরত আছেন। এ পুলিশ কর্মকর্তাই মূলত আড়ালে থেকে বোনের নামে ই-অরেঞ্জ নামের কোম্পানিটি খোলেন। তবে অজ্ঞাত কারণে জুলাই থেকে নাজনিন নাহার বিথী নামের এক নারীকে মালিক বানিয়ে কোম্পানিতে বসানো হয়।
সোহেল রানার বোন সোনিয়া মাহজাবিনের স্বামী মাসরুক রহমান ওরফে সুমন ই-অরেঞ্জের উপদেষ্টার পদে আছেন। গোপনে ই-অরেঞ্জের সঙ্গে যুক্ত হলেও সুমনের পেশা ভিন্ন। তিনি মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ-এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত।
তদন্ত প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, পুলিশ পরিদর্শক সোহেলের বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। রাজধানীতে তার ৪টি ফ্ল্যাট, একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বহুজাতিক কোম্পানির ডিলারশিপ, কৃষি জমি, অভিজাত ক্লাবের সদস্যপদসহ শত কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে দু’টি ফ্ল্যাট রয়েছে অভিজাত আবাসিক এলাকা নিকেতনে। এর একটিতে বসবাস করছেন সাগর নামে তার এক খালু।
এছাড়া, বিটিআই ল্যান্ডমার্ক টাওয়ারের পঞ্চম ফ্লোরে বাণিজ্যিক স্পেস, ইউনিলিভার ইন্টারন্যাশনালের ডিলারশিপ, টিএন্ডজি নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে সোহেল রানার। টিএন্ডজির দুটি শাখার একটি উত্তরা গরীবে নেওয়াজ এভিনিউ এবং অপরটি গুলশানে ডিসিসি মার্কেটের দ্বিতীয় তলায়। এছাড়া পূর্বাচলে ৩ নম্বর সেক্টরে একটি প্লট, কুড়িল বিশ্বরোড সংলগ্ন একটি আবাসিক এলাকায় ‘ই’ এবং ‘আই’ ব্লকে দুটি প্লট, খাগড়াছড়িতে রিসোর্ট নির্মাণের জন্য জায়গা, গ্রামের বাড়িতে ৫শ’ বিঘা কৃষিজমি। পাশাপাশি, বিদেশেও তার মোটা অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ রয়েছে। গুলশানের আমেরিকান ক্লাব এবং জার্মা ন ক্লাবের সদস্য তিনি।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত থেকে সোহেলকে আটক করে বিএসএফ। পরবর্তীতে সোহেলকে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ থানায় সোপর্দ করে বিএসএফ। শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সোহেল রানাকে কোচবিহারের আদালতে তোলা হয়। আদালত ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে তাকে।
সোহেল রানাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, ভারতে রিমান্ডে থাকা ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক পুলিশ পরিদর্শক শেখ সোহেল রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলায় যেহেতু সে ভারতে রিমান্ডে আছে, তাই তাকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া সহজ হবে না। দুই দেশের পুলিশে যোগাযোগ করে সোহেল রানাকে আটকের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। তাকে নিয়ে এরইমধ্যে দু’টি থানার মামলায় তদন্ত চলছে। গুলশান বিভাগ সোহেলকে নিয়ে তদন্ত করছে। রিপোর্ট পেলে দ্রুত শাস্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ভারতের সাথে বন্দী বিনিময় চুক্তি রয়েছে। তাই সোহেল রানাকে ফিরিয়ে আনতে সমস্যা হবে না। যেহেতু সোহেল ভারতে একটি মামলার আসামি সেই প্রক্রিয়া শেষ হলে সোহেলকে অবশ্যই বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হবে। আর প্রক্রিয়া দেখে এটি স্পষ্ট যে সে অবৈধভাবে দেশ ত্যাগ করেছে। এতে কারও গাফিলতি ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে নিশ্চিত করেন আইজিপি।
Leave a reply