স্টাফ রিপোর্টার, নেত্রকোণা:
বাস্তবে সবাই বেঁচে থেকে সুস্থভাবে জীবনযাপন করছেন। ভোটার তালিকাতেও সবাই জীবিত। স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনের সময় ভোটও প্রদান করছেন তারা। শুধু বিধবা হিসেবে উপকারভোগী নারীদের নামে ইস্যু করা কার্ডে জীবিত স্বামীকে দেখানো হয়েছে মৃত।
সরকারি খাতায় স্বামীকে মৃত দেখিয়ে বছরের পর বছর ধরে নেত্রকোণার পূর্বধলায় তুলছেন বিধবাভাতা। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দফতরে দেওয়া হয়েছে অভিযোগ। অভিযোগকারীকে খুন-জখমের হুমকি দেয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসককে দেওয়া লিখিত অভিযোগে জানা যায়, জীবিত থেকেও মৃত এসব মানুষের সংখ্যা অন্তত ১২ জন। তাদের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের পৃথক দু’টি গ্রামে। তারা হলেন জাওয়ানি গ্রামের এখলাছ উদ্দিন, হাছেন আলী, আলী নেওয়াজ, জহর উদ্দিন, হাসিম উদ্দিন, আবদুর রহিম, সিদ্দিক খান, মরম আলী, বজলু মিয়া, রইছ উদ্দিন, ভুগী গ্রামের নবী হোসেন ও আবু হোসেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রত্যেক উপজেলায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে প্রধান ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে একটি কমিটি আছে। রয়েছে প্রতিটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যানকে প্রধান করে আরেকটি কমিটি। ওই কমিটির তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাইয়ের পর তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। চূড়ান্ত তালিকা অনুমোদনের পর সমাজসেবা অধিদফতর সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির বিভিন্ন ভাতা প্রদান করে।
জেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নেত্রকোনায় মোট ৪৭ হাজার ২৭৮ জনকে দেয়া হয় বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা।
এরই মধ্যে পূর্বধলা উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের বিধবা ভাতা পান ৩৭৮ জন। ওই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে দেয়া হয় ৫০ জন নারীকে বিধবা ভাতা।
শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ওই ইউনিয়নের ভুগী গ্রামে গিয়ে কথা হয় উপকারভোগী মোছা. নাছিমার স্বামী আবুল হোসেন, জাওয়ানী গ্রামের রানু বেগমের স্বামী সিদ্দিক খান, মোছা. আছিয়ার স্বামী আ. রহিমের সঙ্গে। তারা বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালাম খান তাদের ভোটার আইডি কার্ড ও ছবি নিয়ে কার্ড করে দিয়েছেন। আমরা এসব বিষয়ে কিছুই জানি না। এখন মনে হচ্ছে এটা আমাদের ঠিক হয়নি। খুব ভুল হয়েছে। আমরা তো এ বিষয়ে বুঝি না, মেম্বার কেন জেনেশুনে এমন কাজ করল।
ভুগি গ্রামের ইসলাম উদ্দিন বলেন, আমি এখনো জীবিত আছি। আমাকে মৃত দেখিয়ে কীভাবে আমার স্ত্রীকে বিধবাভাতা দেয়া হলো? এখন তো আমি আর ভোট দিতে পারব না, জমি ক্রয়-বিক্রয় করতে পারব না। আমি এর বিচার চাই।
বিধবাভাতার কার্ডে অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগকারী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. সুমন মিয়া বলেন, করোনার সময়ে বাড়িতে এসে এসব অনিয়মের কথা শুনে আমি জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছি। ওই ইউপি সদস্য তার সৌদি আরব প্রবাসী ভাই শহীদ খানের নামে পঙ্গু ভাতার টাকা নিয়মিত ওঠাচ্ছেন। শুধু তাই নয় মেম্বারের স্ত্রী, ভাই, বোনসহ প্রতিবেশীদের নাম দিয়ে কর্মসৃজন প্রকল্পের টাকা তুলছেন। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করায় আমাকে খুন করার হুমকি দিচ্ছেন। আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোবাইল ফোনে ইউপি সদস্য আবুল কালাম খান বলেন, কিছু কার্ড আমার আগের সময়ে করা হয়েছে। এগুলোর বিষয়ে জানি না। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে লেগেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আলাউদ্দিন বলেন, এ ঘটনাটি একটি জঘন্য অপরাধ। বিষয়টি শুনে আমি তাৎক্ষণিক উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মুহিবুল্লাহ হককে ওই এলাকায় পাঠিয়েছি। ঘটনার সত্যতা পেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a reply