আমরা মানুষ প্রতিনিয়ত অনেক গুনাহ করে চলেছি। আর সৃষ্টিকর্তা আমাদের সেই গুনাহর জন্য মাফ করে দিবেন। তবে তার জন্য দরকার অনেক ক্ষমা চাওয়া।
আজ আমরা আপনাদেরকে বলব যেভাবে ক্ষমা চাইলে এবং যেসময়ে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করবেন।
পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ১৮৬ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর আমার বান্দা যখন আপনার কাছে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে; আমি তো কাছেই আছি। আমি দোয়া কবুল করি, যখন সে আমার কাছে দোয়া করে।’
এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা ভয় এবং আশা নিয়ে আল্লাহকে ডাকো। নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।’ (সূরা আরাফ : ৫৬)। বান্দামাত্রই চায় আল্লাহ তার দোয়া কবুল করুক। তার ডাক শুনুক। হাদিস শরীফে দোয়া কবুলের সময়, কোন দোয়া আল্লাহ বেশি পছন্দ করেন, তার বিশদ বর্ণনা রয়েছে। তা থেকে আমরা কিছু আলোচনা করতে চেষ্টা করব।
যেই দোয়াগুলো আল্লাহ খুব দ্রুত কবুল করে থাকেন, বেশি কবুল হয় : বান্দা সিজদা অবস্থায় স্বীয় প্রভুর সর্বাধিক নিকটবর্তী হয়। অতএব, তোমরা অধিক মাত্রায় (ঐ অবস্থায়) দোয়া করো। (মুসলিম :৪৮২, নাসায়ী : ১১৩৭, আবু দাউদ : ৮৭৫, আহমাদ : ৯১৬৫)।
যে ব্যক্তি রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠে বলে : লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্’দাহ লা-শারীকালাহু, লাহুল মুলকু, ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুয়া আ’লা কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর। সুবহা’- নাল্লাহি, ওয়ালহা’মদু লিল্লাহি, ওয়া লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়াল্লা-হু আকবার। ওয়া লা-হা’ওলা ওয়ালা-ক্বুওয়াতা ইল্লা-বিল্লা-হিল আ’লিয়্যিল আ’যীম। রাব্বিগফির লী”তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। যদি সে দোয়া করে, তবে তার দোয়া কবুল হবে। যদি সে উঠে অজু করে নামাজ পড়ে, তবে তার নামাজ কবুল করা হবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘কোন দোয়া সর্বাধিক শোনা (কবুল করা) হয়?’
তিনি বললেন : ‘রাত্রির শেষভাগে এবং ফরজ নামাজসমূহের শেষাংশে।’ (তিরমিযী ৩৪৯৯ : ইমাম তিরমিযী ও শায়খ আলবানীর মতে হাদিসটি হাসান সহীহ)। রাসূলুল্লাহ (সা:) আরো বলেন, ‘প্রতি রাতে যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে তখন আমাদের প্রতিপালক পৃথিবীর নিকটবর্তী আকাশে অবতরণ করেন। তখন তিনি বলেন, কে আছে আমার কাছে দোয়া করবে আমি কবুল করব? কে আমার কাছে তার যা দরকার প্রার্থনা করবে আমি তাকে তা দিয়ে দেবো? কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি ক্ষমা করে দেবো।’ (বুখারি : ১১৪৫, মুসলিম)।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে কৃত দোয়া কখনই ফিরিয়ে দেয়া হয় না।’ (তিরমিজি : ৩৫৯৪, আবু দাউদ : ৫২৫, শায়খ আলবানী ইরওয়াউল গালীল : ১/২৬২)। যেকোনো প্রয়োজনে কোনো মুসলিম যদি দোয়া ইউনুস পড়ে, আল্লাহ তার দোয়া কবুল করবেন।’ (তিরমিযী, সহিহুল জামি : ৩৩৮৩)। অন্য হাদিস অনুযায়ী, দোয়া ইউনুস পড়লে আল্লাহ তার দুশ্চিন্তা দূর করে দেবেন। উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লা-আনতা, সুবহা’- নাকা ইন্নি কুনতু-মিনায-যোয়ালিমিন। অর্থ : ‘(হে আল্লাহ) তুমি ছাড়া আর কোনো মা’বুদ নাই, তুমি পবিত্র ও মহান! নিশ্চয়ই আমি জালেমদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সূরা আল-আম্বিয়া : ৮৭)। দুটো সময় এমন যাতে দোয়া ফেরত দেয়া হয় না অথবা খুব কম ফেরত দেয়া হয়। আজানের সময়ের দোয়া এবং যখন যুদ্ধের জন্য মুজাহিদগণ শত্রুর মুখোমুখি হয়।’ (আবু দাউদ, সহীহুল জামি : ৩০৭৯)।
বৃষ্টির সময়ে দোয়া : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : দু’টি বিষয় আছে এমন যেগুলো ফিরিয়ে দেয়া হয় না, আজানের সময় দোয়া ও বৃষ্টির সময়ে দোয়া। (আবু দাউদ, সহীহুল জামি : ৩০৭৮)। ‘যখন তোমরা মোরগের ডাক শুনবে, তখন তোমরা আল্লাহ্র অনুগ্রহ চাইবে, কেননা সে একটি ফেরেশতা দেখেছে। আর যখন তোমরা কোনো গাধার স্বর শুনবে, তখন শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবে, কেননা সে শয়তান দেখেছে। (বুখারি : ৩৩০৩, মুসলিম : ২৭২৯)।
এ ছাড়াও লাইলাতুল ক্বদরের সময় দোয়া, যমযম পানি পান করার আগে দোয়া, মজলুমের দোয়া, সন্তানের জন্য পিতার দোয়া, আরাফার দোয়া, অসহায় বিপদগ্রস্তের দোয়া, রোজাদারের দোয়া, ইফতারির আগের দোয়া, জুমার দিনে বিশেষ একটা সময়ের দোয়া, অনুপস্থিত মুসলিমের জন্য যে দোয়া করা হয়; সেটাও তার জন্য কবুল করা হয়।
Leave a reply