এ মাসেই নতুন দল ঘোষণার কথা জানিয়েছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যের কথা জানিয়ে তিনি বলেন তাদের নতুন রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন না দিলে নির্বাচন করতে দেয়া হবে না।
সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) যমুনা নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন কথা জানান।
এই মুহূর্তে কেন নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেই প্রশ্নের জবাবে নুরুল হক নুর বলেন, বর্তমানে দেশের রাজনীতি একটি সংকটময় সময় পার করছে। এই সংকটে দেশের সব ভালো মানুষগুলোকে রাজনীতিতে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের রাজনীতি দুর্নীতিবাজদের আখড়া হয়েছে। সুশিক্ষিত মানুষের অনেক অভাব আছে রাজনীতিতে। সৎ ও সাহসী রাজনীতিবিদের ঘাটতি আছে।
তরুণ, শিক্ষিত ও সৎ শিক্ষার্থীদের তার এ দলে প্রাধান্য দেয়া হবে উল্লেখ করে নুর বলেন, তরুণদেরকে রাজনীতিতে সংযুক্ত করে আগামীতে পরিবর্তন আনাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও প্রশাসনের সংস্কার করার লক্ষ্য নিয়েই আগাবো।
নতুন এই রাজনৈতিক দলে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ বা পেশাজীবীদের সম্পৃক্ত করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক দল পুরোটা শুধু তরুণদেরকে নিয়েই হয় না। এজন্য আমাদের সাথে সচেতন, অভিজ্ঞ ও শিক্ষিত মানুষদের অংশগ্রহণ থাকবে। এদের মধ্যে শিক্ষক, সাংবাদিক ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তারা থাকবেন বলেও জানান তিনি।
তাদের এই দলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কোনো ভূমিকা থাকবে কিনা জানতে চাইলে নুর জানান, তিনি আমাদের সাথে সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হবেন না। তিনি আমাদের পরামর্শক হিসেবে থাকবেন।
আপাতত আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের মাধ্যমে দলের আত্মপ্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি। সেক্ষেত্রে আহ্বায়ক পদে অভিজ্ঞ কাউকে ও সদস্য সচিব পদে তরুণ কাউকে দায়িত্ব দেয়া হবে। এই পদগুলোতে কারা থাকবে সে বিষয়ে এখনই কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন নুর।
তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আগাবো। আগামী নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করবো। নিয়ম মেনে নিবন্ধনের আবেদন জানাবো। তারপরও নিবন্ধন না দেয়া হলে আমরা কোনো নির্বাচন হতে দেব না।
নিবন্ধন চাওয়ার কথা জানালেও নুর বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব নয়। এ সরকার নির্বাচন কমিশন গঠন করলে সেটি দলকানাই হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের পতন ঘটিয়ে জাতীয় সরকার গঠনে বাধ্য করা হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সরকার পতন আন্দোলনের যৌক্তিকতা ও কোনো দূতাবাসের সমর্থন পাচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ডাকসুর এই সাবেক ভিপি বলেন, যেহেতু সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচনের পেছনে প্রধান অন্তরায় তাই আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে চাই যেন একটি জাতীয় সরকার গঠন করা যায় এবং দক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে উন্নয়ন অংশীদার ও বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর একটি ভূমিকা আছে। সেক্ষেত্রে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে গেলে তাদের সাথেও একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং দরকার। তারাও মনে করছে এই দেশের রাজনীতিতে শূন্যতা আছে, নেতৃত্বে শূন্যতা আছে, রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা আছে। তারা আমাদের মধ্যে একটি সম্ভাবনা দেখছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার ও বন্ধুরাষ্ট্রদের সাথে আমাদের একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং আছে।
কোনো জোটের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার ভাবনা থেকে দল গঠন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জানান, এখনই কোনো জোটের সাথে যাবে না তার দল। কিন্তু ভবিষ্যতে দেশের বৃহৎ স্বার্থে হয়তো বা কোনো জোটের সাথে জড়িত হতে পারে নতুন এই দল।
এদিকে, নুরুল হক নুরদের রাজনৈতিক দল গঠনের সময় আসেনি বলে মনে করেন সাম্প্রতিককালে তাদের সাথে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেয়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। যমুনা নিউজকে তিনি বলেন, তাদের রাজনৈতিক দলের আদর্শ কী হবে, কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষদের নিয়ে তাদের ভাবনা কী কিংবা আফগানিস্তান নিয়ে তারা কী ভাবছে এমন অনেক বিষয়ই স্পষ্ট নয়। শুধু রাজধানীতে প্রেসক্লাবের সামনে কিছু কর্মসূচি পালন করে রাজনৈতিক দল করলে তা কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে না।
বরং জনস্বার্থের বিভিন্ন ইস্যুতে সারাদেশে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান বিভিন্ন সময় বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোকে পরামর্শ দিয়ে আসা এই প্রবীণ চিকিৎসক। এ সময় দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ড নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
Leave a reply