স্টাফ রিপোর্টার, নেত্রকোণা:
বাস্তবে জীবিত থেকেও ভোটার তালিকায় মৃত তারা। যে কারণে জমি বেচাকেনা থেকে শুরু করে সরকারের ১০ টাকা কেজি চালসহ বয়স্ক এবং বিধবা ভাতাও ভাগ্যে জুটছে না তাদের।
এই বিপদের কারণও জানেন না নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুরের কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বারইকান্দি গ্রামের ওই চার বাসিন্দা। শুধু তারাই নন এমন মৃতের তালিকায় রয়েছে অন্তত ১ শ জনের নাম। তারা সবাই নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে চান।
সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তিরা জানান, ওই গ্রামের একজনের নাম জামাল মিয়া (৪৫)। গ্রামে ছোটখাটো ব্যবসা করেন। গত ১০ বছর ধরে জাতীয় পরিচয়পত্রে তিনি মৃত। ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যাংকের ঋণের আবেদন করেও মৃত ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় ঋণ সুবিধা পাননি তিনি।
জামাল মিয়া জানান, গ্রামের একটি স্কুলে পড়াশোনা করে তার সন্তান। স্কুলের ভর্তি কিংবা রেজিস্ট্রেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজেও তার আইডি কার্ড ফিরিয়ে দিয়েছেন শিক্ষক। বাধ্য হয়ে তার স্ত্রীর আইডি কার্ড দিয়ে সন্তানের নাম রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয়েছে।
আরেক ভুক্তভোগী ইদ্রিস আলী (৫৪) জামাল মিয়ার বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে থাকেন। দুই কন্যাসন্তান ঢাকায় পড়াশোনা শেষ করে চাকরির জন্য দীর্ঘদিন ধরেই আবেদন করছেন। চাকরির ইন্টারভিউতে বাবার আইডি কার্ড স্থাপন করতে গিয়ে পড়েন বিড়ম্বনায়। বাবা জীবিত অথচ আইডি কার্ডে লেখা রয়েছে মৃত।
একই গ্রামের বাসিন্দা সুবহান মিয়া। নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে বারবার উপজেলা নির্বাচন অফিসে কাগজপত্র নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে এখন কাগজপত্রই হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। ২০০৯ সালে ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমের সময় পাশের গ্রামে একই নামের আরেক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর শুনে মৃতদের তালিকায় ঢুকে যায় তার নাম। এরপর থেকেই শুরু হয় তার ভোগান্তি। বাড়িতে ঘর তৈরি করতে জমি বিক্রি করতে পাচ্ছেন না তিনি। তাই বাধ্য হয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে থাকছেন ভাঙাঘরে।
অপর এক বাসিন্দা আছিয়া খাতুন (৫৫)। গত ইউপি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি তিনি। কাগজপত্র সমস্যা ভেবে বিষয়টি তখন এড়িয়ে গেলেও সম্প্রতি মৃতদের তালিকায় তার নামের বিষয়টি সামনে এসেছে। স্বামী মারা গেছে অনেক আগেই। বারবার জনপ্রতিনিধিদের কাছে গিয়েও পাননি একটি বয়স্কভাতার কার্ড। কারণ কাগুজে পত্রে তিনি মৃত। করোনাকালীন সরকারের প্রণোদনা হিসেবে ১০ টাকা কেজি দরের চালও কিনতে পারেননি তিনি।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ তথ্যসংগ্রহকারীরা সঠিকভাবে তথ্য যাচাই করেননি। তথ্য সংগ্রহ করার সময় তাদের কারও বাড়িতে যাননি তথ্যসংগ্রহকারী স্থানীয় শিক্ষক। মনগড়া তথ্য দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হালনাগাদ করা হয়েছে। ২৭৮.২৮ বর্গ কিলোমিটারের দুর্গাপুর উপজেলায় মোট জনসংখ্যা রয়েছে দুই লাখ ২৪ হাজার ৮৯৩ জন। আর ওই উপজেলায় স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে এক লাখ ৫১ হাজার ৪১৮ জনকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, জীবিত থেকেও মৃতদের তালিকায় নাম রয়েছে অন্তত ১০০ জনের। এ ছাড়া দ্বৈত ভোটারও রয়েছে আরও আট শতাধিকের মতো। নাম সংশোধনের পাশাপাশি এ ধরনের সমস্যাগুলোও সমাধান করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সুবিধাবঞ্চিতরা।
এ বিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফারহানা শিরিন বলেন, তথ্যসংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্যসংগ্রহের সময় মৃত ব্যক্তিদের নাম কর্তন করে নিয়ে আসে। ওই সময় দেখা যায়, কিছু ভুল তথ্যের কারণে জীবিত ব্যক্তিদের নাম মৃতদের তালিকায় চলে যায়। এসব ক্ষেত্রে নির্বাচন অফিসে এসে নতুন করে আবেদন করলেই আমরা তাদের আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে সমস্যাগুলো আইডেন্টিফাই শেষে পাঠিয়ে দিই। নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে বিধি মোতাবেক আবেদন করলে যতদ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
Leave a reply