টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:
উৎপাদন খরচের চেয়ে বিক্রিমূল্য কম। বেশ কিছুদিন ধরে এমন চলছে। এতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন টাঙ্গাইলের গোপালপুরের পোল্ট্রি খামারিরা। ক্ষোভে-কষ্টে এখন তাই ডিম বিক্রি বাদ দিয়ে সেগুলো ভিক্ষা হিসেবে ফকির-মিসকিনদেরকে দিয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। গোপালপুর শহরে গত বৃহস্পতিবার এমন ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয়ভাবে বৃহস্পতিবার ’ভিক্ষাবার’ হিসেবে পরিচিত। সপ্তাহের এ দিনটিতে ফকির, মিসকিনকে বাজারে ভিক্ষা দেয়া হয়। ব্যবসায়ী ক্ষতির মুখে পড়া খামারি হায়দার আলী সিদ্ধান্ত নিলেন আর উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে ডিম বিক্রি করবেন না। তাই খামারের জমে থাকা ডিমগুলো ভিক্ষুকদেরকে দিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। খবর পেয়ে দুই শতাধিক ভিক্ষুক তার দোকানে এসে ডিমের জন্য ভিড় জমান। গত বৃহস্পতিবার কোনাবাড়ি বাজারে দিনভর ভিক্ষকদেরকে ডিম বিতরণ করেছেন হায়দার আলী।
জানা গেছে, গোপালপুরের চার শতাধিক খামারির পোল্ট্রি ফার্মে প্রায় আট লক্ষাধিক মুরগি আছে। কেউ ব্যাংক ঋণ নিয়ে বা একমাত্র আবাদি জমি বিক্রি করে খামার করেছিলেন। কিন্তু বিগত বেশ কিছু দিন ধরে ডিমের দাম কমে যাওয়ায় সবাই লোকসান দিচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে আলী ফিশ ফুড এন্ড পোল্ট্রি ফিড এর সত্ত্বাধিকারী হায়দার আলী জানান, একটি ডিম উৎপাদনে খরচ পড়ে সাড়ে পাঁচ টাকা। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে চার টাকা থেকে বড় জোর চার টাকা বিশ পয়সায়।
নিরুপায় এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘ভিখারিরাও তো এখন দুই টাকার নিচে ভিক্ষা নিতে চায়না। ক্ষত টাকার আর লস গুনবো? তাই টাকার বদলে ডিম দিয়ে ভিক্ষা দিচ্ছি। এটাই আমার প্রতিবাদ।’
তিনি আরও জানান, বর্তমানে মুরগির খাবার, ঔষধপত্র ও আনুসঙ্গিক সরাঞ্জামের দাম বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। কিন্তু ডিমের দাম কমে যাওয়ায় উপজেলার অনেক খামারি হতাশায় খামার বন্ধ করে দিয়েছেন।
খুররম খান রাসেল নামে আরেক খামারি বলেন, সরকার এখন অনেক স্কুলে ’মিড ডে মিল’ চালু করেছে। সেখানে বিস্কুট বা অন্য সস্তা খাবারের বদলে ডিম দেয়া হলে শিশুদের যেমন পুষ্টির অভাব দূর হতো, তেমনি ডিমের নতুন বাজার সৃষ্টি হতো। তাছাড়া বিদেশি ব্যবসায়ীরা এদেশে এসে বাচ্চা ও ডিম ফুটানোর হ্যাচারির অনুমোদন নিয়ে অবৈধভাবে ডিম উৎপাদন ব্যবসায় নামায় পোলট্রি খাতে অসম প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।
তার অভিযোগ, বিদেশে ডিম রফতানির ব্যবস্থা না থাকায় উৎপাদিত ডিম বাজারজাত হচ্ছেনা। ক্রেতার অভাবে পচে নষ্ট হচ্ছে। সারাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারী পোল্ট্রি খামারিদের অচলাবস্থা নিরসনে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন খুররম খান।
এদিকে জেলা পোল্ট্রি খামার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আওয়াল যমুনা নিউজকে বলেন, নব্বই এর দশকের শুরুতে টাঙ্গাইলে শুরু হয় পোল্ট্রি খামারের ব্যবসা। শুরুতে হাতেগোনা কয়েকটি খামার থাকলেও এখন ব্রয়লার ও লেয়ার মিলিয়ে জেলায় প্রায় ২৫ হাজার ছোট বড় খামার গড়ে উঠেছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে কয়েক লক্ষ লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, প্রথম দিকে ব্যবসা ভালো থাকলেও দিন দিন পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। তবে গত এক বছরে ডিম ও মাংসের দাম সর্ব নিম্ন পর্যায়ে চলে যাওয়ায় অনেক খামারিই পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছে। এখনও যে সকল খামার কোনোমতে টিকে আছে সেগুলোও যে কোন মুহূর্তে বন্ধ হতে পারে।
এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এস এম আওয়াল হক বলেন, জেলায় চাহিদার চাইতে উৎপাদন বেশি হওয়ায় খামারিদের লোকসান হচ্ছে। তবে আমরা সমন্বিত বাজার ব্যবস্থা চালু করার চেষ্টা করছি। এটা করা গেলে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা যাবে। আর পোল্ট্রি শিল্পের সাথে জড়িত পণ্য সামগ্রী ট্যাক্স-ফ্রি আমদানি করা গেলে উৎপাদন খরচ কমানো যাবে।
Leave a reply