আগামীকালের জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন চ্যান্সেলর বেছে নিতে যাচ্ছে জার্মানবাসী। আর এর মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের ১৬ বছরের জার্মান শাসন। প্রথম নারী হিসেবে চ্যান্সেলর নির্বাচিত হয়ে মার্কেল টানা ১৬ বছর শাসন করেছেন ইউরোপের অন্যতম প্রভাবশালী ওই দেশটিকে। হয়ে উঠেছেন জার্মানির স্থিতিশীলতার প্রতীক। টানা ১০ বছর পেয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারীর তকমা।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গত ১৬ বছরের এই দীর্ঘ সময় ধরেই বিশ্বনেতৃত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ অ্যাঙ্গেলা মার্কেল। অথচ, ২০০৫ সালে চ্যান্সেলর হিসেবে শপথ নেয়ার সময় চ্যালেঞ্জ আর সংশয়ের অন্ত ছিলো না। কোয়ান্টাম রসায়নে পিএইচডি ডিগ্রি নেয়া বিজ্ঞানী রাজনীতির মঞ্চে কেমন করবেন, তা নিয়ে ছিলো নানা প্রশ্ন। সব সংশয়সে তুড়ি মেরে উড়িয়ে পর পর চারবার নির্বাচিত হয়েছেন রাষ্ট্রপ্রধান। বিদায় নেয়ার মুহুর্তেও জনপ্রিয়তায় কমতি নেই এতটুকু।
জার্মানিতে বসবাসরত বিদেশিদের জন্য তিনি দ্বিতীয় মায়ের মতো। এই প্রবাসে তিনি শরণার্থীদের নিজ দেশের অনুভূতি দিয়েছেন। ঠাণ্ডা মাথায় একের পর এক সংকট সামাল দেয়ায় অনেকে তাকে ডাকেন ‘ক্রাইসিস চ্যান্সেলর’। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভক্তি, কট্টরপন্থীদের উত্থান কিংবা করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। ‘অভিবাসীবান্ধব’ সমালোচনার ঝুঁকি নিয়েও আশ্রয় দিয়েছেন বিপুলসংখ্যক শরণার্থীকে।
ইতিহাসবিদ ও লেখক রালফ বোলম্যান জানান, মার্কেলের বৈশিষ্ট্য হলো যতো বড় সংকটই হোক, শুরুতে তিনি কোনো মন্তব্য করেন না। কিন্তু যখন পুরো বিষয়টি বুঝে সেটি মোকাবেলার উপায় ঠিক করেন, তখন তার ভিত্তিতেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। এ কারণেই নিজের শাসনামলে বৈশ্বিক অনেক সংকটের মুখে পড়ার পরও তিনি বিপুল জনপ্রিয়।
নারী অধিকারকর্মী ও প্রকাশক অ্যালিস শোয়ার্জার বলেন, যেভাবে মাথা উঁচু রেখে তিনি পৃথিবীর সব ক্ষমতাধর নেতাদের সামলেছেন, তাতে তার সমালোচকরাও মুগ্ধ হয়ে গেছেন। নারীরাও যে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারে, তা দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি। আর পরিস্থিতি এখন এমন যে, জার্মানিতে অনেক সন্তান এখন মায়েদের কাছে জানতে চায়, পুরুষরাও কি চ্যান্সেলর হতে পারবেন?
কেবল নিজ দেশে নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গণে স্থিতিশীলতা রাখতেও বড় ভূমিকা ছিলো ৬৭ বছর বয়সী মার্কেলের। বিশ্ব নেতাদের সারিতে সামনের কাতারে থাকলেও, সুবক্তা হিসেবে তেমন সুনাম নেই তার। তার মতে, কথার কারুকাজ দিয়ে দেশ পরিচালনায় বিশ্বাসী নন তিনি। সুযোগ কিংবা জনপ্রিয়তা থাকার পরও, ২০১৮ সালেই জানিয়ে দেন, আর লড়বেন না নির্বাচনে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম জার্মানির কোনো চ্যান্সেলর ভোট ছাড়াই বিদায় নিচ্ছেন।
Leave a reply