আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন

|

আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন

ছবি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫-তম জন্মদিন আজ (২৮ সেপ্টেম্বর)। ১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেসা দম্পতির জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা নবপর্যায়ের বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। এরপর দীর্ঘ যাত্রায় পার করেছেন নানা চড়াই-উৎরাই। কারাভোগ করেছেন, ছিলেন একাধিকবার গৃহবন্দী। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চারবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রেকর্ড গড়েছেন। তিন দশক ধরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।

বর্তমানে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী জন্মদিনে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসএসসি পাস করেন ঢাকার আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সরকারি ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজের ছাত্রী সংসদের সহসভাপতি ছিলেন। তিনি এই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরের বছর সভাপতি ছিলেন। শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একজন সদস্য এবং ছাত্রলীগের রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই শেখ হাসিনা সব গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

শৈশব-কৈশোর কেটেছে গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা ঘাতকদের গুলিতে নিহত হন। সে সময় পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও ছোট বোন শেখ রেহানা। ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে অবশেষে তিনি ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসেন।

১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন শেখ হাসিনা। ওই বছর দলের সম্মেলনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এরপর ওই বছরের ১৭ মে দেশে ফেরেন তিনি।

দেশে ফিরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার পরপরই তিনি শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়েন। বারবার কারান্তরীণ করা হয়। তাকে হত্যার জন্য কমপক্ষে ২২ বার সশস্ত্র হামলা করা হয়।

১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে। প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। এরপর ২০০৮ সালে দ্বিতীয়, ২০১৪ সালে তৃতীয় ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি।

মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় শেখ হাসিনা সবসময়ই আপসহীন। ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনায় দায়িত্ব নিয়ে তার সরকার ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল স্থাপনের জন্য আইন প্রণয়ন করে। এই আইনের আওতায় স্থাপিত ট্রাইবুনাল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছে এবং রায় কার্যকর করা হচ্ছে।

শত বাধা-বিপত্তি এবং হত্যার হুমকিসহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা ভাত-ভোট এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য অবিচল থেকে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়ন দেশের কাতারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তার নেতৃত্বে। শেখ হাসিনার অপরিসীম আত্মত্যাগের ফলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।

শেখ হাসিনার শাসনামলে আর্থ-সামাজিক খাতে দেশ অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে। খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ং-সম্পূর্ণতা অর্জন, বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো হয় তার সরকারের নেতৃত্বে। কৃষকদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি এবং ভূমিহীন, দুস্থ মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি চালু করেন।

গণতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা, সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ও অগ্রগতিতে বিশ্বাসী এবং দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন তার জীবনের অন্যতম লক্ষ্য।

শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য বিশ্বের বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন ডিগ্রি এবং পুরস্কার প্রদান করে।

এর আগে বিশ্বের বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউট শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র সমুন্নত ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন পর্যায়ের পদক প্রদান করে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে দায়িত্বশীল নীতি ও তার মানবিকতার জন্য প্রধানমন্ত্রী আইপিএস ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড এবং ২০১৮ স্পেশাল ডিসটিংশন অ্যাওয়ার্ড ফর লিডারশিপ গ্রহণ করেন।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রবক্তা স্বপ্নদর্শী এই নেতা ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণের পর থেকে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে দলকে সুসংগঠিত করেন এবং ১৯৯৬ সালে প্রথম, ২০০৮ সালে দ্বিতীয় এবং ২০১৪ সালে তৃতীয় এবং ২০১৮ সালে চতুর্থবারের মতো নির্বাচনে জয়লাভ করে দলকে দেশের নেতৃত্বের আসনে বসাতে সক্ষম হন।

এনএনআর/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply