চলন্ত ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে পা হড়কে পড়ে গেলেন সংসদ সদস্য। আর সেকারণে বরখাস্ত করা হলো স্টেশন মাস্টারকে। শুধু তাই নয়, সংসদ সদস্য পড়ে যাবার ঘটনায় তার সমর্থকদের হাতে লাঞ্ছিত হন সহকারী স্টেশন মাস্টারও!
গত সোমবার সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ঢাকাগামী চিত্রা এক্সপ্রেসে স্ত্রীকে তুলে দিয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যান সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের (উল্লাপাড়া) সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম। দ্রুত স্টেশন মাস্টারের কক্ষে বসিয়ে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এসময় সংসদ সদস্যের কিছু সমর্থক সহকারী স্টেশন মাস্টার আব্দুল বাতেনের কক্ষে ঢুকে তাকে চড়-থাপ্পড় মারে। এক পর্যায়ে সংকেত দেয়ার পতাকার লাঠি দিয়ে রেল কর্মকর্তাদের মারধর করতে থাকে তারা।
এ ঘটনায় স্টেশন মাস্টার শামছুল আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পাকশী রেলের ব্যবস্থাপক অসিম কুমার তালুকদারের নির্দেশে বুধবার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ঘটনার তদন্তে পাকশী রেল বিভাগ থেকে ২ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অসিম কুমার তালুকদার বলেন, বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক। সংসদ সদস্য পড়ে যাবার ঘটনায় আমরা যেমন মর্মাহত, আবার তার সমর্থকরা সহকারী স্টেশন মাস্টারকে মারপিট করাতেও আমরা কষ্ট পেয়েছি।
উল্লাপাড়া স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রী ওঠানামার জন্য রেল বিভাগ থেকে ৩ মিনিটের স্টপেজ নির্ধারিত থাকলেও সংসদ সদস্যের কারণে সেদিন সাড়ে ৪ মিনিট স্টপেজ দেয়া হয়েছিল জানিয়ে পাকশী রেলের ব্যবস্থাপক বলেন, এমপি সাহেব যে হঠাৎ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে শুধু স্ত্রীকে তুলে দিয়ে আকস্মিক ট্রেন থেকে নেমে পড়বেন, সহকারী স্টেশন মাস্টার যিনি ট্রেনের ক্লিয়ারেন্স দিয়েছেন, তিনি হয়তো জানতেনই না। তারপরেও যেহেতু ট্রেনে ওঠার আগে স্টেশন মাস্টার কক্ষে তিনি বসে ছিলেন এবং স্টেশন মাস্টার শামছুল আলম তাকে ট্রেনে তুলে দিতে তার সাথে যান, তাই প্রাথমিকভাবে তার কিছুটা দায়িত্ব অবহেলা প্রতীয়মান হওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সহকারী স্টেশন মাস্টার নিরাপরাধ ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাকে অহেতুক মারপিট করায় পাকশী রেলওয়ে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এ ঘটনায় সে ভীষণ ভয়ও পেয়েছে।
অপরদিকে সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘স্টেশন মাস্টারদের নির্বুদ্ধিতার কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। সাধারণত এ স্টেশনে যাত্রী ওঠানামার জন্য কমপক্ষে পাঁচ মিনিট দেরি করে ট্রেন। কিন্তু সেদিন মাত্র চার মিনিট পর ট্রেনটি ছেড়ে দেয়। আমি নামতে গিয়ে পড়ে যাই।’
মারধরের ঘটনার কথা অস্বীকার করে তানভীর ইমাম বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে রেল কর্তৃপক্ষকে জানাবো বলে তাদের ভয় দেখাই। সেকারণে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাকে হেয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
সাময়িক বরখাস্ত করায় অসন্তোষ জানিয়ে স্টেশন মাস্টার শামছুল আলম বলেন, পানি তো সব সময় নিচের দিকেই পড়ে। আমি কী অপরাধ করলাম যে আমাকে বরখাস্ত করা হল? আমি তো এমপির সাথেই ছিলাম!
(সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি গোলাম মোস্তফা রুবেলের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি।)
যমুনা অনলাইন: টিএফ
Leave a reply