‘ঢাকা বোট ক্লাবকে আন্তর্জাতিকমানের গবেষণা কেন্দ্র করা যেতে পারে’

|

অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ঢাকা বোট ক্লাব। তুরাগ নদীর তীরে নান্দনিক এ স্থাপনা নিয়ে ফেসবুকে নিজের ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। স্ট্যাটাসে তিনি ক্লাবটিকে বিনোদন কেন্দ্রের পরিবর্তে আন্তর্জাতিকমানের একটি আবাসিক গবেষণা কেন্দ্রে রূপান্তরিত করার পরামর্শ দিয়েছেন।

স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
দেড় বছর পর বাসা থেকে প্রথম ঘুরতে বেরোলাম। গুগল ম্যাপ দেখে ভাবলাম আশুলিয়া পেরিয়ে দিয়াবাড়ির কাশফুল দেখতে যাওয়া যেতে পারে, কিন্তু তার থেকেও বড় আগ্রহের বিষয় হল পথেই ইদানীং বহুল আলোচিত ঢাকা বোট ক্লাবটি দেখার সুযোগ হবে। রাস্তার গেট থেকে সুদৃশ্য ক্লাব ভবন বেশ দূরে, সুসজ্জিত রাস্তা চলে গেছে সে পর্যন্ত। মূল ভবনের পাশে নদীর পাড়ে আরও বেশ কিছু জায়গা মনে হয় ক্লাবের ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হচ্ছে, দূর থেকে ভালো বোঝা গেলো না। গেটে কড়া নিরাপত্তা। শুধু সামনের প্রাঙ্গণ পর্যন্ত একটু হেঁটে ঘুরে দেখা যায় কিনা সে অনুরোধ করাতে কোনো কাজ হলো না। আমার মতো বয়স্ক ছোটোখাটো নিরীহ গোছের একজন মানুষকে গেটের ভেতর এক পা দিতেও কেনো এত আপত্তি ভেবে হাসিই পেলো।

আমার একটা উদ্দেশ্য ছিল ভবনটি ও নদী তীরের জায়গাটায় পরিবেশের ও নান্দনিক সৌন্দর্য সম্বন্ধে একটা ধারণা পাওয়া। এক চিত্রনায়িকাকে নিয়ে সেখানকার একটি সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে যখন সংবাদমাধ্যমে অনেক লেখালেখি হচ্ছিল, আমি লক্ষ্য রাখছিলাম ওই ক্লাবটির ভৌত কাঠামো নিয়ে যেটুকু জানা যাচ্ছিল তার উপর। সম্ভবত, ক্লাব কর্তৃপক্ষের বর্ণনাতেই জানা গিয়েছিল ক্লাব ঘরটি ক্লাবের সদস্য ও তাদের পরিবারের বিনোদনের উপযুক্ত করে নির্মাণ করা হয়েছে এবং বিশেষত দোতলার কিছু ঘর থেকে নাকি নদীর অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়।

আমার তাৎক্ষণিকভাবে মনে হয়েছিল এই পুরো অবকাঠামো একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা কেন্দ্রের জন্য খুব উপযোগী হতো, যেখানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিষয়ের গবেষকরা কিছু সময়ের জন্য আবাসিক ফেলো (resident fellow) হিসেবে এসে এই নান্দনিক পরিবেশে তাদের গবেষণার কাজ, শিল্প-সাহিত্য চর্চা, কর্মশালা ও সেমিনারের মাধ্যমে ভাবনার আদান-প্রদান করতে পারবেন। এর জন্য অবশ্য আবাসিক সুবিধার ব্যবস্থাও থাকতে হবে, যে কারণে আমি ভবনের পাশের নদী তীরের জায়গাটা লক্ষ্য করছিলাম।

ইতালির মিলান শহরের কাছে অপূর্ব সুন্দর পরিবেশে Rockefeller Bellagio Center এ রকম একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আবাসিক গবেষণা কেন্দ্র (আমার প্রয়াত স্ত্রী একাধিকবার সেখানে গবেষণার জন্য গিয়েছিলেন)। প্রতিবেশী ভারতে এরকম গবেষণা কেন্দ্রের ২টি বহুল পরিচিত উদাহরণ মনে আসছে: দিল্লির Habitat Centre (ব্যক্তি মালিকানাধীন) এবং সিমলার পূর্ববর্তী রাষ্ট্রপতি নিবাসে স্থাপিত Indian Institute of Advanced Studies (ভারত সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় দ্বারা পরিচালিত)। এ ২টি প্রতিষ্ঠানই আমার দেখা।

সংবাদমাধ্যমের আলোচনায় এটাও দেখেছিলাম যে নদীর তীরের আইন অনুযায়ী এই সংরক্ষিতস্থানে কেবল ‘জনস্বার্থের’ বিচারেই ব্যক্তি মালিকানাধীন ক্লাবটিকে জায়গাটি ‘বিশেষ বিবেচনায়’ বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল, অবশ্য এর সত্যাসত্য আমার জানা নেই। তবে ‘জনস্বার্থের’ বিচারেই যদি আসলে এই অনুমতি দেয়া হয়ে থাকে, তবে ক্লাবের সদস্যদের পরিবারের বিনোদনের চাইতে একটি আন্তর্জাতিকমানের আবাসিক গবেষণা কেন্দ্র যে জ্ঞানভিত্তিক সমৃদ্ধ জাতি গঠনে অবদান রাখার মাধ্যমে অনেক বেশি জনস্বার্থের অনুকূল হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সন্দেহ নাই ক্লাবের সদস্যরা এখানে বেশ কিছু বিনিয়োগ করেছেন। তারা এই বিনিয়োগকে গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের জন্য endowment fund-এ রূপান্তরিত করে বাংলাদেশে কর্পোরেট philanthrophy-র অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন। সরকার ব্যয়ভারের অন্তত আংশিক দায়িত্ব গ্রহণ করে উদ্যোক্তাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও করতে পারে।

দেশ-বিদেশের উৎস থেকেও (Rockefeller বা Gates ফাউন্ডেশন, ইত্যাদি) অর্থ সংগ্রহ সম্ভব। ক্লাব মালিকদের সম্মতি থাকলে এ রকম একটা উদ্যোগ নিয়ে এগুনো যেতে পারে।

ইউএইচ/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply