যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলে আদিবাসী শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন

|

যুক্তরাষ্ট্রের আবাসিক স্কুলে আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ান শিশুদের উপর চালানো হতো ভয়াবহ যৌন নির্যাতন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন আবাসিক স্কুলে চরম নিপীড়ন চালানো হতো আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ান শিশুদের ওপর। কেটে নেয়া হতো চুল, করা হতো যৌন হয়রানিও। চেষ্টা চলতো আদিবাসীদের সংস্কৃতিকে মুছে ফেলার। সাবেক এক শিক্ষার্থীর জবানবন্দিতে উঠে এলো নির্যাতনের ভয়াবহতা। নাভাহো জাতিগোষ্ঠীর ঐ নারী জানান, শ্বেতাঙ্গদের নির্যাতনের কারণে মৃত্যুও হয়েছে অনেক শিশুর।

অ্যারিজোনার টল্যানি লেক বোর্ডিং স্কুলটি পরিচালনা করতো তৎকালীন ফেডারেল সরকার। আদিবাসী শিশুদের তথাকথিত আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার নামে এই স্কুলের বিরুদ্ধে রয়েছে নির্যাতনের নানা অভিযোগ। সেই সময়কার স্কুলে পড়া রেড ইন্ডিয়ান এক শিক্ষার্থী বেসি স্মিথের স্মৃতি কথায় উঠে আসে প্রতিষ্ঠানটির অন্ধকার ইতিহাস।

যুক্তরাষ্ট্রের আবাসিক স্কুলে আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ান শিশুদের উপর চালানো হতো ভয়াবহ যৌন নির্যাতন।

বেসি স্মিথ জানান, অভিভাবকদের বাধ্য করা হতো তারা যেন তাদের সন্তানদের ওইসব আবাসিক স্কুলে পাঠান। যদি কেউ এই আদেশ মানতে অস্বীকৃতি জানাতেন তবে তা আইনের লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য করা হতো। এমনকি শাস্তিস্বরূপ কারাবন্দিও করা হতো।

১৯৫০ এর দশকে ওই স্কুলে ভর্তি হতে বাধ্য করা হয় বেসিকে। জানালেন, শ্বেতাঙ্গদের চাপিয়ে দেয়া আইন কানুনের লক্ষ্যই ছিল আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের সংস্কৃতিকে মুছে ফেলা। তাদের ভাষা, পোষাক ও খাবার পরিবর্তন করা নিয়ে চাপ দেয়া হতো। অমান্য করলে চলতো কঠোর শাস্তি।

বেসি স্মিথ বলেন, আমরা নিজস্ব নাভাহো ভাষায় কথা বলতে পারতাম না। শুধু ইংরেজিতেই কথা বলতে হতো আমাদের। নাভাহো সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য লম্বা চুল। যা মাথার মুকুট হিসেবে মনে করা হয়। অথচ ওই স্কুলে ভর্তি করার সাথে সাথে আমার মাথার চুল কেটে ফেলা হয়। মনে আছে যখন ওরা আমার চুল কাটছিল আমি তখন চিৎকার করে কাঁদছিলাম। আর আমার মা অসহায়ের মতো সেই দৃশ্য দেখছিলেন। কারণ এছাড়া তার আর কোনো উপায় ছিল না।

এখানেই শেষ নয়, অনেক শিশুর ওপর চালানো হতো যৌন নিপীড়নও। নির্যাতনের কারণে অনেক শিশুর মৃত্যুও হয় স্কুলটিতে। তবে সব তথ্যই গোপন করে ফেলতো কর্তৃপক্ষ ।

বেসি স্মিথ এ ব্যাপারে বলেন, আমি দুইবার যৌন হয়রানির শিকার হয়েছি। এমনটা অনেকের ক্ষেত্রেই হয়েছে। শিশুদের উপর যেভাবে নিপীড়ন চালানো হতো তাতে অনেকের মৃত্যুও হয়েছে। কিন্তু গোপনে তাদের অন্যত্র কবর দেয়া হতো। কেউ জানতেও পারতো না।

সম্প্রতি কানাডার বিভিন্ন প্রদেশে সন্ধান মেলে একাধিক গণকবরের। প্রাথমিক তদন্তের পর জানা যায় আবাসিক স্কুলে নিপীড়নের শিকার শিশুদের কবর ছিল সেগুলো। ওই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রেও নতুন করে আলোচনায় আসে আদিবাসী শিশু নিপীড়নের বিষয়টি।

এম ই/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply