এক মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসকের জমি দখল করে দশতলা ভবন তুলেছেন এক পুলিশ পরিদর্শক। রাজধানীর মোহাম্মাদী হাউজিং সোসাইটি লিমিটেডে ২৬ বছর আগে জমি কেনেন অধ্যাপক ডাক্তার সিদ্দিকুর রহমান। তার অভিযোগ, ২০১৪ সালে সেই জমি রাতের আধারে দখল করে নেয়, তৎকালীন মোহাম্মাদপুর এলাকার ট্রাফিক পরিদর্শক ওবায়দুল হক। সেখানে আলিশান ভবন করেছেন সেই পরিদর্শক।
ছাত্রাবস্থায় অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছি। দেশ স্বাধীন করেছি। সেই দেশের একজন পুলিশ সদস্য আমার সারা জীবনের সঞ্চয় দখল করলো। আমি কয়েকবার সুইসাউডও করতে গেছি, এমন ক্ষোভ-আক্ষেপ একজন মুক্তিযোদ্ধার। ১৯৯৫ সালে মোহাম্মদুপুরের মোহাম্মদী হাউজিংয়ের ৯ নম্বর রোডের ২০ নম্বর প্লটটি কেনেন মুক্তিযোদ্ধা ডা. সিদ্দিকুর রহমান। প্যানশন-স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে জমির টাকা পরিশোধ করেন জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের সাবেক এই অধ্যাপক। কিন্তু, ২০১৪ সালে তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার।
পুলিশ কর্মকর্তার জমি দখলের ভুক্তভোগী ডা. সিদ্দিকুর রহমান, স্বপ্ন ছিল রিটায়ারমেন্টের পর জমিটিতে আমি নিজের জন্য বাড়ি করবো এবং মায়ের নামে একটি হাসপাতাল তৈরি করবো। কিন্তু ২০১৪ সালে আমার সাইনবোর্ড পাল্টিয়ে মোহাম্মদপুর জোনের টিআই ওবায়দুল হক অ্যান্ড গং রাতের অন্ধকারে জমিটি দখল করে নেয়। এ বিষয়ে আমি রাজউকে একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। যেখানে রাজউক তিনবার এ স্থাপনাটি অবৈধ ঘোষণা করেছে।
দখল করা সেই জমিতে এখন উঠেছে আলিশান দশতলা বাড়ি। নাম আন্দালুসিয়া টাওয়ার। কৌশলে ২০ নম্বর প্লটকে বানানো হয়েছে ১৮/এ প্লট। অভিযোগ নিয়ে পুলিশ সদর-ডিএমপি-রাজউক-সিটি করপোরেশন এমনকি দুদকে গেছেন ডা. সিদ্দিক। আদালতে মামলাও করেন।
দুদকের নির্দেশনায় ভবনের ছাড়পত্র বাতিল করে কয়েক দফা দখল উচ্ছেদ করতে যায় রাজউক। কিন্তু, সাতবছরেও জমি ফিরে পাননি ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা।
রাজউকের তৎকালীন পরিচালক ওয়ালিউর রহমান, করোনায় মারা গেছেন। এখনকার রাজউক কর্মকর্তারা বলছেন, পদক্ষেপ নিয়ে উচ্চ আদালতে ইন্সপেক্টর ওবায়দুল হক একটি রিট করায় কিছু করতে পারছেন না তারা।
রাউজকের রঙ্গন মন্ডল সহকারী অথরাইজড অফিসার (অঞ্চল-৩) বলেন, দুই পক্ষই কাগজ দেখায়। বর্তমানে আমাদের ছাড়পত্র যেহেতু বাতিল হয়ে গেছে সেহেতু নকশা বাতিল করা ছাড়া আমাদের এখন আর কোনো কাজ নেই। এ ঘটনায় এখন একটি রিট চলছে।
বিভাগীয় তদন্তের পর ইন্সপেক্টর ওবায়দুলের ২বছরের জন্য পদোন্নতি বাতিল করার সুপারিশ করে ডিএমপি। তবে, জমি দখলের বিষয়ে নিম্ন আদালতে মামলা থাকায় এনিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।
ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করায় তার সিনিয়রটি এক বছরের জন্য বাতিল করা হয়েছে। জায়গা দখল সম্পর্কিত কোনো শাস্তি তাকে দেয়া হয়নি। আদালতে এ বিষয়ে মামলা চলছে, আদালত ব্যবস্থা নিবে।
অভিযোগ আছে, বাড়িটি রক্ষায় কয়েকজন প্রভাবশালীকে মালিকানার অংশ দিয়েছেন ওবায়দুল। মোহাম্মদী হাউজিংয়ের কর্মকর্তারাও ডা. সিদ্দিকের কাছেই বিক্রি করা হয়েছে এই জমি।
মোহাম্মদী হাউজিং সোসাইটি লিমিটেডের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান জানান, ওই জায়গাটি দীর্ঘদিন যাবৎ টিনশেড ঘর দিয়ে দখল করা ছিল। আমার জানামতে, সিদ্দিকুর রহমান এ জমি বিক্রি করেননি।
তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন পুলিশ পরিদর্শক ওবায়দুল হক।
Leave a reply