পানিবাহিত রোগ থেকে বাঁচতে গাঁটের পয়সা খরচ করে অনেক দাম দিয়ে বোতলের পানি কিনে খেতে অনেকেই বাধ্য হন। শুধু বাংলাদেশে নয়, এমনটি কমবেশি অনেক দেশেই দেখা যায়।
নিরাপদ পানির সর্বব্যাপী চাহিদায় ফুলে ফেপে উঠেছে বোতলজাত পানির ব্যবসা। নামি-দামি অনেক কোমল পানীয় কোম্পানিও এই বোতলজাত পানির ব্যবসায় জড়িত।
কিন্তু অনেক টাকা খরচ করে নামি কোম্পানির বোতলের পানি পান করলেও নিশ্চিন্তে থাকতে পারছেন না ভোক্তা। এমনটি জানালেন যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম বিষয়ক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অর্ব মিডিয়া।
সংস্থাটির পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, নাম করা কোম্পানির সুপরিচিত অনেক বোতলজাত মিনারেল ওয়াটারে রয়েছে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা।
এই গবেষণাটির নেতৃত্ব দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রেডোনিয়ায় স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্কের মাইক্রোপ্লাস্টিক বিষয়ক গবেষক শেরি ম্যাসন। ম্যাসন ও তার দল ব্রাজিল, মেক্সিকো, চিন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, লেবানন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের ১১টি ব্র্যান্ডের প্রায় আড়াই শত বোতলের পানি পরীক্ষা করেন।
পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তারা দেখতে পেয়েছেন, ৯৩ শতাংশ ক্ষেত্রে পানির মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণার অস্তিত্ব রয়েছে। গবেষকদের মতে, বোতলজাত পানিতে পাওয়া ওই সকল প্লাস্টিকের মধ্যে রয়েছে নাইলন, পলিপ্রপি-লেন ও পলিথাইলিন টেরেপথালেটের মতো রাসায়নিক উপাদান।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, বোতলজাত পানির মধ্যে পাওয়া বিষাক্ত রাসায়নিকের ৬৫ শতাংশ প্লাস্টিক কণা। প্রতিটি বোতলে দশ হাজারেরও বেশি প্লাস্টিক কণার সন্ধান পাওয়া গেছে, অর্থাৎ লিটার প্রতি প্লাস্টিক কণার গড় পরিমাণ ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ।
কীভাবে এ প্লাস্টিক কণা বোতলে পানিতে মিশছে? এ বিষয়ে ম্যাসন ও তার দল জানাচ্ছেন, প্লাস্টিকে তৈরি বোতল বা ঢাকনা থেকেই ওই বোতলের পানিতে মিশছে প্লাস্টিক।
ইউরোপীয় ‘নিরাপদ খাবার কর্তৃপক্ষ’-এর মতে, মানুষের শরীরে প্লাস্টিকের কণা ঢুকলে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে হজম হলেও থেকে যাওয়া কিছু কণা পরবর্তীতে বেশ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁঁড়ানোর সম্ভাবনা থেকে যায়।
সম্ভাব্য ক্ষতির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ের কথা বলেননি গবেষকরা। তবে তারা বলছেন, অটিজম, ক্যান্সার, শুক্রাণু হ্রাসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গবেষকদের দলনেতা ম্যাসন বলেন, “যত দ্রুত প্লাস্টিকের বোতলের পানিকে পরিহার করা যায়, ততই মঙ্গল।’’ কলের পানি বোতলজাত পানির তুলনায় নিরাপদ বলেও মনে করেন তিনি।
যে ১১টি ব্র্যান্ডের বোতলজাত পানি পরীক্ষা করে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা পেয়েছেন গবেষকরা:
আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড:
অ্যাকুয়াফিনা (পেপসিকো)
ডাসানি (কোকা-কোলা)
ইভিয়ান (ডানোন)
নেসলে পিওয়র লাইফ (নেসলে)
সান পেলেগ্রিনো (নেসলে)
জাতীয় পর্যায়ে শীর্ষ ব্র্যান্ড
ইন্দোনেশিয়ার অ্যাকুয়া (ডানোন)
ভারতের বিসলেরি (বিসলেরি ইন্টারন্যাশনাল)
মেক্সিকোর ইপুরা (পেপসিকো)
জার্মানির জেরোলস্টেইনার (জেরোলস্টেইনার ব্রুনেন)
ব্রাজিলের মিনালবা (গ্রুপো এডসন কিয়েরোজ)
চীনের ওয়াহাহা (হাংজু ওয়াহাহা চীন গ্রুপ)
এ বিষয়ে বেশ কিছু কোম্পানি বলেছে, তারা দীর্ঘ দিন ধরে পানির মান পরীক্ষা করে দেখছেন, এবং এতে কিছু প্লাস্টিকের উপস্থিতি শেষ পর্যন্ত থেকে যায়। তবে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর মাত্রার তুলনায় কম। আবার কেউ কেউ ম্যাসন ও তার দলের বোতলজাত পানি পরীক্ষার পদ্ধতিটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
এদিকে এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, গবেষণার এই চমকে উঠার মতো ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণে নেমেছে স্বাস্থ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি।
বোতলজাত পানিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা মানব শরীরের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে কিনা? ফেললেও তা কতটা, সে বিষয়ে ডব্লিউএইচও বিস্তারিত কাজে নেমেছে বলেও ওই প্রতিবেদনটিতে জানানো হয়।
যমুনা অনলাইন: এফএইচ
Leave a reply