আপনার মনে কি কখনো প্রশ্ন এসেছে, মানুষের কোনো অঙ্গ বিকল হয়ে গেলে সে অঙ্গ অন্য কোনো প্রাণীর অঙ্গ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব কিনা? বিজ্ঞান সেটি নিয়ে অবশ্য বহুদিন ধরেই গবেষণা করছে।
তবে এ প্রক্রিয়ায় মূল বাধা ছিল, ‘অর্গান রিজেকশন’। অর্থাৎ আমাদের দেহে যদি অন্য কারোর বা অন্যকিছুর অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়, তবে সেই ‘দাতা অঙ্গে’ থাকা অপরিচিত উপাদানকে গ্রহণে ‘অস্বীকৃতি’ জানায় আমাদের দেহের রোগপ্রতিরোধব্যবস্থা।
শূকরের কিডনি সহজেই মানবদেহে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব, কিন্তু শূকরের কোষে এক ধরনের শর্করা থাকে, যা অর্গান রিজেকশনের কারণ হয়। এজন্য নিউ ইয়র্কের একদল বিজ্ঞানী শূকরের কিডনি থেকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে মুক্ত করেন সেই শর্করা।
এরপর সেই কিডনি সংযোজন করা হয় রোগীর দেহের বাইরের অংশের একটি রগের সাথে। যেহেতু প্রাথমিকভাবে কার্যকারিতা পরখ করাই উদ্দেশ্য, তাই পরীক্ষামূলকভাবে কিডনিটি বাইরেই সংযুক্ত করা হয়। এভাবে প্রায় ৫৪ ঘন্টা পর্যবেক্ষণের পর দেখা যায়, সেখানে ঠিকমতোই মুত্র জমছে। কোনো লিক হচ্ছে না।
নিউ ইয়র্কের ল্যাংগোন ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট ইনস্টিটিউটের ডাঃ রবার্ট মন্টগোমারির নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী সফল এই পরীক্ষার নেতৃত্ব দেন। মন্টগোমারির মতে, কয়েক বছরের মধ্যেই কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে বিপ্লব আসতে যাচ্ছে। এদিকে ইউনিভার্সিটি অফ মিনেসোটা মেডিকেল স্কুলের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু অ্যাডামস একে ভবিষ্যতের পথে সফল এবং সঠিক পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন।
বানর জাতীয় প্রাণীর তুলনায় অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে শূকরের ব্যবহার সুবিধাজনক। কেননা, খাওয়ার জন্য বৃহৎ পরিসরে এমনিই শূকর উৎপাদন করা হয়, ফলে বিলুপ্তি সংক্রান্ত নৈতিক বাধাটাও তুলনামূলক কম। তাছাড়া শূকরের অঙ্গের আকারও মানুষের জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ।
শূকরের হৃদযন্ত্রের ভাল্ভ বিগত কয়েক দশক ধরে সফলভাবে মানবশরীরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রক্তের লঘুকারক হিসেবে ব্যবহৃতও ‘হেপারিন’ও আসে শূকর থেকেই। শূকরের চামড়া পোড়া অংশে গ্রাফট হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। এমনকি চীনের চিকিৎসকেরা রোগীর দৃষ্টিশক্তি ফেরাতে শূকরের কর্নিয়াকে কাজে লাগান।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৫৬-৬০ জন কিডনি-রোগী দাতার অভাবে মারা যান।
Leave a reply