দরিদ্র দেশগুলোর ভ্যাকসিন ধনীদের পকেটে; ২০২২ সালেও থাকবে কোভিড

|

ভ্যাকসিন অপর্যাপ্ততার কারণে কোভিড মহামারি পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে দরিদ্র দেশগুলোর প্রয়োজনের চেয়ে অন্তত এক বছর বেশি সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটির সিনিয়র লিডার ব্রুস এইলওয়ার্ড মন্তব্য করেছেন, অবধারিতভাবেই কোভিড মহামারি ২০২২ সালেও চলমান থাকবে।

উৎপাদনের ক্ষেত্রে ওষুধ কোম্পানিগুলো যেন দরিদ্র দেশগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে পারে, সেজন্য ধনী দেশগুলোকে কোভ্যাক্স থেকে আপাতত ভ্যাকসিনের অর্ডার দিতে নিরুৎসাহিত করেছেন ডা. এইলওয়ার্ড। প্রসঙ্গত, বিশ্বের অন্যান্য মহাদেশে যেখানে ভ্যাকসিন প্রদানের হার অন্তত ৪০ মতাংশ, সেখানে আফ্রিকা মহাদেশে এই হার শতকরা ৫ এরও কম।

দ্য পিপলস ভ্যাকসিন নামে একটি দাতব্য জোটের তথ্যকে উদ্ধৃত করে বিবিসি একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে। যেখানে বলা হয়েছে, দরিদ্র দেশগুলোর জন্য ওষুধ কোম্পানিগুলোর প্রতিশ্রুত ভ্যাকসিনের মাত্র ১৪ শতাংশ সেই দেশগুলো অবধি পৌঁছাতে পারছে। তার মানে, বেশিরভাগ ভ্যাকসিনই চলে যাচ্ছে উচ্চ ও উচ্চমধ্যম আয়ের দেশগুলোর হাতে। বৈশ্বিকভাবে মাত্র ২ দশমিক ৬ ভাগ ভ্যাকসিন পাচ্ছে আফ্রিকানরা।

জাতিসংঘের অধীনে বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন বণ্টনের কাজ করা সংস্থা কোভ্যাক্সের মাধ্যমে নিজেদের জনগণের জন্য একতরফা ভ্যাকসিন নিয়ে নিচ্ছে যুক্তরাজ্য ও কানাডা, এমনই গুরুতর অভিযোগ তুলেছে অক্সফাম, ইউএনএইডস-এর মতো দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলো।

প্রসঙ্গত, কোভ্যাক্স প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকল দেশের মধ্যে ভ্যাকসিনের সুষ্ঠু বণ্টন নিশ্চিত করা, ফলে ধনী দেশগুলোর কোভ্যাক্স থেকে ভ্যাকসিন গ্রহণের আইনত বৈধতা রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ জি-সেভেনভুক্ত দেশই আবার ওষুধ কোম্পানিগুলোর সাথে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে যাচ্ছে, এবং তাদের কাছ থেকেও সরাসরি ভ্যাকসিন কিনছে।

যার ফলে ভ্যাকসিন কোম্পানিগুলোর সাথে যেসব দেশের সরাসরি চুক্তিতে যাওয়ার সামর্থ্য নেই, অর্থাৎ, যাদের জন্য কোভ্যাক্সই একমাত্র উপায়, তারা ভ্যাকসিন পাবার দৌড়ে পিছিয়ে পড়ছে।

আর একেই নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন অক্সফামের বৈশ্বিক স্বাস্থ্য উপদেষ্টা রোহিত মালপানি। তার বক্তব্য, ধনী দেশগুলো এভাবে দুই দিক থেকেই সুবিধা নিতে পারে না।

অন্যদিকে কানাডার সরকার বলছে, দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে অর্ডার দেয়া ভ্যাকসিন সম্পূর্ণ হাতে আসার পর যখন আমরা দেখেছি যে তা জনগণের জন্য যথেষ্ট, তখনই আমরা কোভ্যাক্সে অর্ডারকৃত ভ্যাকসিন কোভ্যাক্সকে ফিরিয়ে দিয়েছি, যাতে তা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পুনর্বণ্টন করা যায়।

আবার ৪৮ মিলিয়ন ইউরো অনুদান দিয়ে কোভ্যাক্স চালুর অন্যতম কৃতিত্ব নিজেদের বলে মনে করে যুক্তরাজ্য। অবশ্য শেয়ার্ড স্কিম-এ ভ্যাকসিন বন্ধের ব্যাপারে তাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য নেই। যদিও ইতোমধ্যেই ভ্যাকসিনের অভাবে থাকা বিভিন্ন দেশে ১ কোটি ভ্যাকসিন পাঠিয়েছে তারা।

উল্লেখ্য, কোভ্যাক্সের লক্ষ্যমাত্রা ছিল, এ বছরের শেষ নাগাদ ২০০ কোটি ভ্যাকসিন বণ্টন। কিন্তু বছরের দশম মাসে এসে কোভ্যাক্স দিতে পেরেছে মাত্র ৩৭ কোটি ভ্যাকসিন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply