নানুয়ার দিঘির পাড়ের মণ্ডপে হনুমানের মূর্তির কোলে পবিত্র কোরআন রাখার ঘটনার আশপাশের ১২টি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। কয়েকটি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৩ অক্টোবর রাত ১১টা ৫৮ মিনিটে দারোগাবাড়ির মাজারসংলগ্ন মসজিদে প্রবেশ করেন এক যুবক। কথা বলেন মসজিদে থাকা হাফেজ হুমায়ুন ও মাজারের খেদমতকারী ফয়সালের সাথে। রাত ১২টায় সেখান থেকে চলে যান তিনি। এরপর রাত ২টা ১০ মিনিটে আবার মসজিদে যান তিনি। এসময় বইয়ের মতো দেখতে কিছু একটা নিয়ে নাড়াচাড়া করেন। এরপর বই আকৃতির কিছু একটা হাতে নিয়ে পাশের দারোগাবাড়ি মাজার গেট থেকে পুকুরপাড় দিয়ে এগিয়ে যান।
পুলিশ বলছে, ওই যুবক ইকবাল। ফুটেজে বইয়ের মতো যা দেখা যায় সেটি কোরআন শরিফ। অন্য একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, হাতে হনুমানের গদা কাঁধে নিয়ে দিঘিরপাড়ে ঘোরাফেরা করছেন ইকবাল। তবে মণ্ডপে সিসিটিভি না থাকায় কোরআন রাখার চিত্র দেখা যায়নি। পুলিশের ভাষ্য, কোরআন শরিফ মন্দিরে রেখে গদা নিয়ে বের হন ইকবাল।
স্থানীয়রা জানান, নানুয়ার দীঘির পাশের ওই মাজারটির নাম শাহ আবদুল্লাহ গাজীপুরি (র)-এর মাজার। মসজিদ থেকে মণ্ডপ পর্যন্ত হেঁটে যেতে সময় লাগে প্রায় ৫ মিনিট। নানুয়ার দীঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে শুরুতে ঢুকতে ব্যর্থ হয়েছিলেন ইকবাল হোসেন। পূজামণ্ডপটিতে শুরুতে ইকবাল লোকজন দেখে মিশন সফল না করে ফিরে আসেন। পরে তিনি চকবাজার স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক মোড় ঘুরে পূজামণ্ডপের দিকে রওনা হন। এ সময় তার সঙ্গে দুজন নৈশপ্রহরীর দেখা হয়। তাদের সঙ্গে ইকবালের কথাও হয়। এরপর ইকবাল পবিত্র কুরআন হাতে নিয়ে ডিগাম্বরীতলা সড়ক দিয়ে নানুয়া দিঘির পূজামণ্ডপে প্রবেশ করেন। ওই সময় সেখানে লোকজন না থাকার সুযোগ নিয়ে তিনি কোরআন শরিফ রেখে যান।
পরে সকালে একজন ৯৯৯-এ ফোন করে বিষয়টি পুলিশকে জানায়। এরপর ফেসবুক লাইভ আর কিছু মানুষের উত্তেজনা ও হৈচৈয়ের মধ্যেও হাত নাড়তে দেখা যায় এই আলোচিত যুবক ইকবালকে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে সময়ে সময়ে। নগরীর কান্দিরপাড়, চকবাজার, মনোহরপুর, ঠাকুরপাড়া এলাকায় উত্তেজিত জনতা মিছিল শ্লোগান আর হাঙ্গামা সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মাঠে নামে পুলিশ বিজিবি ও র্যাব। দাঙ্গার আগুনে জ্বলতে থাকে বহু জনপদ।
ঘটনার আট দিন পর গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাত ১০টার দিকে কক্সবাজারের সুগন্ধা সৈকত এলাকা থেকে ইকবালকে গ্রেফতার করা হয়। কুমিল্লা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) এম তানভীর আহমেদ জানান, তার পেছনে অন্য কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী মূল ভূমিকা পালন করেছে। তা তদন্তে জানা যাবে।
এদিকে সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ হওয়ার পর মন্তব্য জানতে চাইলে মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অচিন্ত্য দাস টিটু বলেন, মণ্ডপেও সিসিটিভি স্থাপনের কথা বলা হয়েছিল। আয়োজকদের খামখেয়ালির কারণেই তা করা যায়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
Leave a reply