অভাবের সাথে যুদ্ধ করে ক্লান্ত, একটু রেস্ট দরকার; বিজিবি সদস্যের আত্মহত্যা

|

সুইসাইড নোটে সোহরাব হোসাইন লেখেন, নামে সরকারি চাকরি কিন্তু বেতনটা ঐ নামের ওপরই। ৭ বছর চাকরি, এখনও বাড়িতে গেলে কোথাও যাওয়া হয় না, ছুটির সময়টাও চোরের মতো থাকতে হয়।

ময়মনসিংহ ব্যুরো:

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের কাছে থাকা বন্দুক দিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন সোহরাব হোসাইন চৌধুরী নামে বিজিবির এক সিপাহী। ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহে।

শুক্রবার (২২ অক্টোবর) রাত ৮টা ৩ মিনিটে ফেসবুকে নিজের টাইমলাইনে একটি সুইসাইড নোট পোস্ট করার পর রাত ৯ টার দিকে ময়মনসিংহের খাগডহর এলাকায় অবস্থিত ৩৯ বিজিবি ব্যাটালিয়ন ক্যাম্পে আত্মহত্যা করেন তিনি।

শনিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিজিবি ৩৯ ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক ইউনুস আলী।

নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে রাতেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ। নিহত সোহরাব ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলার আনোয়ার হোসেন চৌধুরীর ছেলে।

এর আগে, নিজের বেতনের টাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়া নিয়ে ক্ষোভে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন সোহরাব হোসাইন। সেখানে তিনি লেখেন, মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্ম নিয়ে ভালো কিছু আশা করা মহাপাপ। নামে সরকারি চাকরি কিন্তু বেতনটা ঐ নামের ওপরই। ৭ বছর চাকুরি এখনও বাড়িতে গেলে ঠিক মতো একটু কোথাও যাওয়া হয় না, ছুটির সময়টাও চোরের মতো থাকতে হয়।

তিনি আরও লেখেন, গত কিছুদিন আগে আম্মু খুব অসুস্থ হয়ে পড়লো, মায়ের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে গেলাম পরীক্ষা নিরীক্ষার পর মায়ের জন্য ঔষধ কিনবো, কিন্তু সে টাকা আর হাতে নেই। পরে মামার কাছ থেকে ধার নিয়ে মাকে ঔষধ কিনে গাড়ি ভাড়া করে দিলাম। এমনটা প্রতিমাসেই হতে থাকে। না পারি নিজের খুশি মতো একটা জিনিস কিনতে কিংবা একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে ভালো কিছু খেতে। না পারি পরিবারের চাহিদা পূরণ করতে। তার মধ্যে বর্তমান বাজারের যা পরিস্থিতি এতে বাজার করা কিংবা সংসার চালানো কতটা কঠিন বোঝানোর মতো না।

মানসিক যন্ত্রণা আর অভাবের সাথে যুদ্ধ করতে করতে এখন ক্লান্ত উল্লেখ করে সোহরাব হোসাইন আরও লিখেছেন, ছোট ভাইটা শারীরিকভাবে কিছুটা অক্ষম তার জন্য কিছু করবো তার সুযোগ হয়নি এই জীবনে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ প্রশ্ন করে, বিয়ে করি না কেন। কিন্তু মানুষকে তো আমার সরকারি চাকরির ভেতরটা দেখাতে পারি না। আমার বেতন, আমার সুযোগ, সুবিধা, সেভিংস এই সব কিছুতে অন্য একটা মানুষকে আনা আমার জন্য মরার উপর খাড়ার ঘা। তাই বিয়ে শাদির চিন্তা করিও না। শুধু খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে পারলে খুশি এমন চাইলাম, তাও আর হয়ে উঠলো না। ৭টা বছর মানসিক যন্ত্রণা আর অভাবের সাথে যুদ্ধ করতে করতে সত্যি বড় ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। এইবার একটু রেস্ট দরকার।

আমার পরিবার, সহকর্মী, সিনিয়র-জুনিয়র, আমার বন্ধুদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এই নিকৃষ্ট কাজের জন্য। পারলে ক্ষমা করবেন এছাড়া বিকল্প কোনো পথ আমার ছিল না।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply