কুমিল্লার পর চকোরিয়ার মসজিদে কোরআনসহ ধরা পড়েছিল ইকবাল

|

কুমিল্লায় মণ্ডপে কোরআন রাখার দায়ে অভিযুক্ত ইকবালের আরও একটি ভিডিও যমুনা নিউজের হাতে এসেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, চকোরিয়ার এক মসজিদে মাঝরাতে আজান দেয়ার সময় ধরা পড়ে ইকবাল। তার কাছে গামছায় প্যাঁচানো একটি কোরআন শরিফ পাওয়া যায়।

রাত আড়াইটায় কক্সবাজারের চকোরিয়ায় সবুজ পাহাড় মসজিদের মিম্বরে উঠে আজান দিচ্ছিলেন ইকবাল। আজান শুনে স্থানীয়রা তাকে আটক করে। তখন স্থানীয়রা পরিচয় ও ঠিকানা জানতে চাইলে ইকবাল জানান, তার বাড়ি কুমিল্লায়। গন্তব্য কক্সবাজার। সেখানে গিয়ে হোটেলে চাকরি করবে সে। পরে স্থানীয়রা গামছা ও কোরআন রেখে একটি শার্ট দিয়ে কক্সবাজারের গাড়িতে তুলে দেয় তাকে। ধরা পড়ার সময়ও তার গায়ে ওই শার্টটি ছিল।

এদিকে মণ্ডপে কোরআন রাখার নেপথ্যে কারা, তা জানতে ইকবালসহ ৪ জনের আরও ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও কোরআন অবমাননার মামলার তদন্ত করছে সিআইডি।

এর আগে গত ২১ অক্টোবর রাতে কক্সবাজার থেকে তাকে আটক করে পুলিশ। আটকের আগেই মণ্ডপে কোরআন রাখার প্রমাণস্বরূপ সিসিটিভি ভিডিও ভাইরাল হলে দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে ইকবাল। শুরু থেকেই তার পরিবারের দাবি মাদকাসক্ত ইকবাল। প্রতিবেশিরাও তার সম্পর্কে জানে না ভালো করে। যমুনা টিভির অনুসন্ধানে দেখা গেছে পেশায় একজন রংমিস্ত্রি তিনি।

একসময় সীমান্তপথে চোরাই পণ্য বিক্রির সাথেও জড়িত ছিলেন ইকবাল। ইকবালের মা বিবি আমেনা ও ভাই রায়হানের দাবি, মাদকাসক্ত সে। বখাটেপনার কারণে বিভিন্ন সময় গণপিটুনির শিকারও হয়েছে ইকবাল। সপ্তম শ্রেণি পাশ করা ইকবাল বিয়ে করেছে দুবার। আছে দুই সন্তানও। বাড়ি কুমিল্লা নগরীর সাহাপাড়া এলাকায়। পৈতৃক ভিটা বিক্রির পর সেখানকার রবীন্দ্র চন্দ্রের বাড়িতে চার মাস ধরে ভাড়া থাকে তার পরিবার। তাকে নিয়ে তেমন ধারণা নেই বাড়ির মালিক ও প্রতিবেশীদেরও। ইকবালের রাজনৈতিক কোনো পরিচয় আছে কিনা, তা জানা যায়নি। কেন সে এমন ঘৃণ্য কাজ করলো তা জিজ্ঞাসাবাদের পরই বেরিয়ে আসবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

কুমিল্লার মণ্ডপে কোরআন রাখার ঘটনার দিন (১৩ অক্টোবর) রাতের ঘটনার আশপাশের ১২টি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। কয়েকটি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রাত ১১টা ৫৮ মিনিটে দারোগাবাড়ির মাজারসংলগ্ন মসজিদে প্রবেশ করেন ইকবাল। কথা বলেন মসজিদে থাকা হাফেজ হুমায়ুন ও মাজারের খেদমতকারী ফয়সালের সাথে। রাত ১২টায় সেখান থেকে চলে যান তিনি। এরপর রাত ২টা ১০ মিনিটে আবার মসজিদে যান তিনি। এরপর কোরআর শরিফ হাতে নিয়ে পাশের দারোগাবাড়ি মাজার গেট থেকে পুকুরপাড় ধরে এগিয়ে যান তিনি।

সেদিনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, হাতে হনুমানের গদা কাঁধে নিয়ে দিঘিরপাড়ে ঘোরাফেরা করছেন ইকবাল। তবে মণ্ডপে সিসিটিভি না থাকায় কোরআন রাখার চিত্র দেখা যায়নি। পুলিশের ভাষ্য, কোরআন শরিফ মন্দিরে রেখে গদা নিয়ে বের হন ইকবাল।

স্থানীয়রা জানান, নানুয়ার দীঘির পাশের ওই মাজারটির নাম শাহ আবদুল্লাহ গাজীপুরি (র)-এর মাজার। মসজিদ থেকে মণ্ডপ পর্যন্ত হেঁটে যেতে সময় লাগে প্রায় ৫ মিনিট। নানুয়ার দীঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে শুরুতে ঢুকতে ব্যর্থ হয়েছিলেন ইকবাল হোসেন। পূজামণ্ডপটিতে শুরুতে ইকবাল লোকজন দেখে মিশন সফল না করে ফিরে আসেন। পরে তিনি চকবাজার স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক মোড় ঘুরে পূজামণ্ডপের দিকে রওনা হন। এ সময় তার সঙ্গে দুজন নৈশপ্রহরীর দেখা হয়। তাদের সঙ্গে ইকবালের কথাও হয়। এরপর ইকবাল পবিত্র কুরআন হাতে নিয়ে ডিগাম্বরীতলা সড়ক দিয়ে নানুয়া দিঘির পূজামণ্ডপে প্রবেশ করেন। ওই সময় সেখানে লোকজন না থাকার সুযোগ নিয়ে তিনি কোরআন শরিফ রেখে যান।

পরে সকালে একজন ৯৯৯-এ ফোন করে বিষয়টি পুলিশকে জানায়। এরপর ফেসবুক লাইভ আর কিছু মানুষের উত্তেজনা ও হৈচৈয়ের মধ্যেও হাত নাড়তে দেখা যায় এই আলোচিত যুবক ইকবালকে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে সময়ে সময়ে। নগরীর কান্দিরপাড়, চকবাজার, মনোহরপুর, ঠাকুরপাড়া এলাকায় উত্তেজিত জনতা মিছিল শ্লোগান আর হাঙ্গামা সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মাঠে নামে পুলিশ বিজিবি ও র‍্যাব। দাঙ্গার আগুনে জ্বলতে থাকে বহু জনপদ।

ঘটনার আট দিন পর, ২১ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে কক্সবাজারের সুগন্ধা সৈকত এলাকা থেকে ইকবালকে গ্রেফতার করা হয়।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply