গৃহহীন এক বৃদ্ধের গল্প

|

খোলা আকাশের নিচে বছরের পর বছর ধরে থাকছেন ৮৪ বছরের প্রবীণ খলিল শেখ। এখনও ভ্যান টেনে ফেরি করে আহার জোগান তিনি।এ বয়সে এতো প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও কারও করুণা চান না মাগুরার শালিখার খলিল। শুধু ভ্যানটিতে ইঞ্জিন লাগিয়ে আর ছোট্ট থাকার জায়গা করে দিলেই খুশি তিনি। কষ্ট হলেও উপার্জন করে জীবিকা চালাতে চান শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত।

প্রবীণ খলিল শেখের এখন বিশ্রামের সময়। জীবন সায়াহ্নে তার পাবার কথা পরিবারের সদস্যদের সেবা-শুশ্রূষা। কিন্তু সেই মানুষটি শুধু একটুখানি অন্ন যোগাড়ের জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানছেন ভ্যান। পুরানো-নতুন মিলিয়ে হাতেগোনা কিছু কাপড় দৈনিক ফেরি করাই তার পেশা।

মাগুরার শালিখা উপজেলার ছয়ঘরিয়া গ্রামের বৃদ্ধ খলিল শেখের নেই কোনো ঘর। সম্প্রতি তিনি নামমাত্র মূল্যে একটি চৌকি কিনেছেন। সেটিতেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন খোলা আকাশের নিচে। তারও নির্দিষ্ট কোনো স্থান নেই। যেদিন যেখানে ফাঁকা পান, রাতে চৌকি বিছিয়ে শুয়ে পড়েন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলে আশপাশের যে কোনো ছাউনিই হয়ে ওঠে বৃদ্ধ এই দম্পতির আশ্রয়স্থল।

বরাবরই খলিল শেখের জীবন ছিল যুদ্ধের। ছেলেবেলায় বাগেরহাটে বাবার সাথে হাটে গিয়ে হারিয়ে যান। ঝিনাইদহের কালিগঞ্জের মনছুর বিশ্বাস ছোট্ট খলিলের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেন। মনছুর শেখের মৃত্যুর পর তিনি বেরিয়ে পড়েন রুটিরুজির সন্ধানে। সেই থেকেই শুরু ছিন্নমূল জীবনের। যুবক বয়সে ঘর বাঁধেন রাবেয়া বেগমের সাথে। একে একে হয় চার মেয়ে। সবার বিয়েও দিয়েছেন সাধ্যমত আয়োজন করে। কিন্তু প্রবীণ অসহায় বাবার কোনো খোঁজ নেয় না চার কন্যার কেউই।

মাঝখানে কিছুদিন অন্যের দয়াদক্ষিণ্যে ঠাঁই হয়েছিল বাগেরহাটের ফকিরহাটের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে। পেয়েছিলেন বয়স্কভাতার কার্ডও। কিন্তু মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা তার অ্যাকাউন্টে আসে কিনা, তা জানেন না খলিল শেখ। তাই নিজেই সাধ্যমত চেষ্টা করছেন এ বয়সেও মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জন করে পেট চালানোর।

দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে আক্রান্ত খলিল। যেখানে তিন বেলা খাবার জোটানোই দায়, সেখানে শহরে গিয়ে জটিল রোগের চিকিৎসা করানো আপাতত এই প্রবীণের কাছে বিলাসিতাই।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply