উন্নত দেশগুলো তাদের অর্থনীতিকে চাঙা করতে গিয়েই ডেকে আনছে পরিবেশগত বিপর্যয়, এমন কথা প্রায়ই বলে থাকে উন্নয়নশীল দেশগুলো। আর এমন বিতর্ক উঠেছে ভারতের মধ্যপ্রদেশে, যেখানে বুক্সওয়াহা নামক জঙ্গলের নিচে পাওয়া গেছে বিলিয়ন ডলার মূল্যের হীরের খনি। মধ্যপ্রদেশ সরকার চায় বন উজাড় করে খনি থেকে উত্তোলন করা হোক হীরে। কিন্তু সেখানকার অধিবাসীদের দাবি, এই জঙ্গলই তাদের বেঁচে থাকার শেষ আশ্রয়।
একটা মুরগি দিনে দুটি ডিম দেয়। কিন্তু একসাথে সবগুলো ডিম পাওয়ার লোভে মুরগিটাকে হত্যা করার শিক্ষণীয় গল্প পড়েও আমরা কিছু শিখিনি। তারা চায় জঙ্গলকে ধ্বংস করে দিতে। কিন্তু এই জঙ্গল তো আমাদের কাছে ডিম দেয়া মুরগি, আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন। এমনটাই বললেন বুক্সওয়াহা জঙ্গলের নিকটবর্তী জনপদের একজন অধিবাসী।
জঙ্গলটির ২ লাখ গাছ কেটে ফেলার অনুমতি দিয়েছে মধ্যপ্রদেশ সরকার। আর এরমধ্য দিয়েই হাজার হাজার প্রাণী এবং বেশ কয়েকটি সম্প্রদায়ের ভবিষ্যৎ এখন ধ্বংসের সম্মুখীন। কেবল প্রাণী বৈচিত্র্যই নয়, ওই এলাকার বেশ কটি সম্প্রদায় বেঁচে থাকার জন্যই সম্পূর্ণভাবে বুক্সওয়াহা জঙ্গলের উপর নির্ভরশীল।
গাছগাছড়া থেকে ঔষধ প্রস্তুত করেন এমন একজন লোক বলেন, সবাইকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কী চায়। এই বন ধ্বংস হলে আমি হয়তো না খেতে পেয়েই মারা যাবো। কিন্তু আমার একার পক্ষে এই বন রক্ষা করা সম্ভব নয়।
স্থানীয় আরেক অধিবাসী বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা এখানে প্রকৃতির সান্নিধ্যে বসবাস করে এসেছেন কয়েকশো বা হাজার বছর ধরে। আমরা বেঁচে আছি বন থেকে সংগ্রহ করা ফল-ফলাদি খেয়ে। আমাদের কোনো খামার নেই, গবাদী পশু নেই। জানি না, এই বন ধ্বংস হলে আমরা আদৌ বেঁচে থাকতে পারবো কিনা।
এদিকে, রাজ্যের খনি মন্ত্রী ব্রিজেন্দ্র প্রতাপ সিং বিবিসিকে জানান, এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেছেন তিনি। সে সময় একজনও হীরের খনির বিরোধীতা করেনি বলেও দাবি করেন তিনি। ব্রিজেন্দ্র প্রতাপ আরও বলেন, উল্টো সবাই সেখানে চাকরির প্রত্যাশা করছে।
কিন্তু সম্প্রদায়গুলোর মানুষই কেবল না, পরিবেশ বিশেষজ্ঞরাও দ্বিতীয়বারের মতো বুক্সওয়াহা জঙ্গল উজাড় করে খনি থেকে হীরে উত্তোলনের বিরোধীতা করেছে।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালে রিও তিন্টো নামক অ্যাংলো-অস্ট্রেলিয়ান একটি কোম্পানিকে বুক্সওয়াহা জঙ্গলে হীরের খনি খুঁজে বের করার দায়িত্ব দেয়া হয়। এবং একসময় তারা জঙ্গলটির নিচে হীরের খনি খুঁজেও পায়, যার অর্থমূল্য প্রায় ৭৩০ কোটি মার্কিন ডলার। তবে সেজন্য ধ্বংস করতে হবে প্রায় ৯৫০ একর বনাঞ্চল।
২০১৬ সালে স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে রিও তিন্টো নামক কোম্পানিটি এই প্রজেক্ট বাদ দিতে বাধ্য হয়। তারপর মধ্যপ্রদেশ সরকার আবারও এই প্রজেক্টের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। আর এর ফলশ্রুতিতেই স্থানীয় জনগণ আশঙ্কা করছে, এবার হয়তো আর তাদের আবাসস্থলকে বাঁচানো গেল না।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
Leave a reply