অবশেষে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন

|

ছবি: সংগৃহীত


নিজস্ব প্রতিবেদক:
 

আবারও সচল হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে আগামীকাল ১৩ নভেম্বর স্টেশনটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। ওই দিন থেকেই পূর্বাঞ্চল রেলপথে যাতায়াতকারী ট্রেনগুলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে নির্ধারিত যাত্রাবিরতি করবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পূর্বাঞ্চল রেলপথের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে প্রতি মাসে অর্ধকোটি টাকার টিকিট বিক্রি হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-নোয়াখালী রুটে চলাচলকারী সাতটি আন্তঃনগর, সাতটি মেইল ও কমিউটার ট্রেন যাত্রাবিরতি করে স্টেশনটিতে। প্রতিদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশন ব্যবহার করে অন্তত ২-৩ হাজার যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করেন।

উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধীতা করে গত ২৬-২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, পৌরসভা কার্যালয়, জেলা পরিষদ কার্যালয়, সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গণ ও জেলা গণগ্রন্থাগারসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনটিতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় ২৬ মার্চ বিকেলে। স্টেশন মাস্টারের কক্ষ, টিকিট কাউন্টার ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষসহ অন্যান্য কক্ষগুলো আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়। সিগন্যালিং সিস্টেম পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলায় ২৭ মার্চ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে সকল ট্রেনের নির্ধারিত যাত্রা বিরতি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেন না থামায় যাত্রীদের ট্রেনে করে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরবর্তী আখাউড়া ও আশুগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে ট্রেনে উঠতে হতো। গত ১২ সেপ্টেম্বর আশুগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনে উঠতে গিয়ে তালশহর রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় বাবা ও দুই ছেলের মৃত্যু হয়। যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ অবসানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন দ্রুত সংস্কার করে সব ট্রেনের নির্ধারিত যাত্রাবিরতি চালুর দাবিতে আন্দোলন শুরু করে নাগরিক সংগঠনগুলো।
 

এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের মর্যাদা ‘বি’ ক্লাস থেকে ‘ডি’ ক্লাসে নামিয়ে ১৫ জুন থেকে তিনটি মেইল ও একটি কমিউটার এবং ১৬ জুন থেকে একটি আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রারিবতি দেয়া হয়। পরবর্তীতে স্টেশনের সংস্কার শুরু করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কয়েক মাসের সংস্কার কাজে নতুন করে স্থাপন করা হয় সিগন্যালিং সিস্টেম।

সরেজমিনে শক্রবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, আগুনে পুড়িয়ে দেয়া টিকিট কাউন্টার ও স্টেশন মাস্টারের কক্ষ ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষসহ অন্যান্য কক্ষগুলোর সংস্কার কাজসহ  নতুন সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া উঁচু করা হয়েছে প্ল্যাটফর্মও। উদ্বোধনের জন্য এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া থেকে নিয়মিত ট্রেনে চলাচল করেন উত্তম কুমার সাহা; তিনি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে দুই ঘণ্টায় ট্রেনে করে ঢাকায় যাওয়া যায়। আর বাসে করে যানজট ঠেলে ঢাকায় পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। এ অবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেন না থামার কারণে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আরেক যাত্রী রুবেল সিকদার জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষের জন্য ট্রেনে যাতায়াত করতে সুবিধা। কম খরচে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। রেলওয়ে স্টেশনটি আবার চালু হওয়ার মাধ্যমে যাত্রীদের সাড়ে ৭ মাস ধরে পোহানো অসহনীয় দুর্ভোগের অবসান হবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, শনিবার সিলেটগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে আসবে ১১.১৫ মিনিটে। কমলাপুর রেল স্টেশনে রেলমন্ত্রী অ্যাড. নুরুল ইসলাম সুজন উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। পাশপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেল স্টেশনে দুপুরে ঢাকা থেকে আগত যাত্রীদের বরণ করে নেয়ার কথা রয়েছে স্থানীয় সাংসদ ও জেলা আ.লীগের সভাপতি র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদীর চৌধুরৗ, এম.পি।


এই ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মো. শোয়েব বলেন, স্টেশনের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। কাল শনিবার (১৩ নভেম্বর) চলমান  সংস্কার কাজ শেষে স্টেশনটি সচল করা হবে। সে লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। উদ্বোধনের দিন থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন যাত্রাবিরতি করবে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply