বিষমুক্ত কৃষির জন্য সার নিষিদ্ধ শ্রীলঙ্কায়, কৃষকরা কী বলছেন?

|

রাসায়নিক সার ও কীটনাশকমুক্ত সম্পূর্ণ অর্গানিক চাষাবাদের উদ্যোগ নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। এ লক্ষ্যে কৃষির সাথে সম্পৃক্ত রাসায়নিক দ্রব্য আমদানিও নিষিদ্ধ করেছে দেশটি। তাদের লক্ষ্য, জনগণের জন্য বিষমুক্ত কৃষি নিশ্চিত করা।

তবে বিকল্প তৈরি না করেই সার আমদানি বন্ধ করায় বিপাকে পড়েছে শ্রীলঙ্কার কৃষকরা। সারের দাবিতে রীতিমতো আন্দোলনে নেমেছে তারা। কারো কাঁধে কফিন। কেউ আবার প্রতিবাদী শ্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে যোগ দিয়েছেন মিছিলে। চাষাবাদের এই মৌসুমে মাঠ ফেলে রাজপথে নেমেছেন শ্রীলঙ্কার কৃষকরা। দাবি একটাই, লাগবে সার।

সম্প্রতি শতভাগ অরগানিক আবাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শ্রীলঙ্কার সরকার। বন্ধ করেছে সব ধরনের রাসায়নিক সার আমদানি। অর্গানিক চাষাবাদকে স্বাগত জানালেও হঠাৎ সার বন্ধ হওয়ায় বিপাকে কৃষকরা। তারা বলছেন, কার্বনিক সার তৈরির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো সে সম্পদ আমাদের নেই। আর জৈব সার বানানোর জ্ঞানও তাদের নেই বলে জানান কৃষকরা।

ক্ষতিকর রাসায়নিক বর্জন করে, অরগানিক চাষাবাদ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সারা বিশ্বেই। তবে কৃষকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না দিয়েই হঠাৎ সারমুক্ত কৃষির সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে শ্রীলঙ্কার সরকার। এমনকি তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দেয়ার আশঙ্কাও করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পেরাদেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বুদ্ধি মারাম্বি বলছেন, শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতার পর দেশের জন্য সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত এটি। তার মতে, এটা খাদ্য নিরাপত্তায় তীব্র আঘাত হানবে। খাদ্য সংকট দেখা দেবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত অবশ্যই বিজ্ঞানসম্মতভাবে বিবেচনা করে নেয়া উচিত। আকস্মিক সিদ্ধান্ত ভয়াবহতা ডেকে আনতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।

অন্যান্য দেশের মতো শ্রীলঙ্কাতেও কৃষিকাজে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের বিপুল ব্যবহার রয়েছে। তবে ক্ষতিকর এ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর সরকার। কৃষি বিষয়ক মন্ত্রণালয় বলছে, স্বাস্থ্য খাত ও সাধারণ জনগণ সবাই এই রাসায়নিক ব্যবহারের বিরোধী। যেভাবে ফসলে সার ব্যবহার করা হয়, সেটা কোনোভাবেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। স্বাস্থ্যকর খাবার উৎপাদন ও কৃষিকাজকে টেকসই করার জন্যই এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

সারের সংকটে এ বছর শ্রীলঙ্কায় ধানের উৎপাদন ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সার আমদানি বন্ধ করায় চীনসহ অনেক দেশের ক্ষোভের মুখেও পড়তে হচ্ছে শ্রীলঙ্কাকে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply