৪ ওভারে ২২ রান খরচায় ১ উইকেট। টি-টোয়েন্টির হিসেবেও এমন কোনো আকর্ষণীয় বোলিং ফিগার নয় এটি। তবে পাকিস্তানের তিন হার্ড হিটার- বাবর আজম, রিজওয়ান ও ফাখার জামানের জন্য ভিন্ন ৩টি পরিকল্পনায় বল করে সফল হওয়া জাম্পা দেখিয়েছেন, হাই ভোল্টেজ ম্যাচেও কীভাবে স্নায়ুকে বশে রেখে বোকা বানানো যায় প্রতিপক্ষকে।
অ্যাডাম জাম্পা দেখলেন, ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসছেন ফাখার জামান। ডেলিভারিটি ফাস্ট করলেন অজি লেফস্পিনার, ঘণ্টায় ৯৬ কিলোমিটার গতিতে। উইকেটে স্কিড করে এমন এক লেংথে বল পেলেন ফাখার যে, কোনো মতে মিড উইকেটে বল ঠেকে সিঙ্গেলই নিতে পারলেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে ১৬-তম ওভারে কেবল ৫টি সিঙ্গেল গেছে জাম্পার বলে। এর সাথে বলে রাখা দরকার, এই বিশ্বকাপে এই নিয়ে ৬ ম্যাচের মধ্যে ৫টিতেই ৪ ওভার বল করে ২৪ এর কম রান দিয়েছেন জাম্পা।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে পাওয়ার প্লে শেষ হবার পরপরই আক্রমণে আসেন জাম্পা। রিজওয়ান ও বাবর আজম, দুই ব্যাটারই ক্রিজে সেট হয়ে গেলেও রান রেট নিয়ন্ত্রণেই রেখেছিল অজিরা। এর কৃতিত্ব জাম্পা পাবেন অনেকটাই। রিজওয়ানের সময় ওয়াইড আউট সাইড অফস্ট্যাম্পে বল করে গেছেন তিনি। একবার হিসেবে গড়বড় করে রিজওয়ানের কাছে মিড উইকেটে ছয় হজম করতে হয় তাকে। অন্যদিকে, বাবরের সময় ফুল লেংথে বল করে গেছেন জাম্পা। বাবরও সেগুলো থেকে বাউন্ডারি বা ওভার বাউন্ডারির দেখা পাননি। শেষমেশ স্লগ সুইপের টাইমিঙে ভজঘট পাকিয়ে লং অনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেছেন বাবর। সেটাও জাম্পারই বলে।
স্টার্ক-কামিন্স-হ্যাজলউডদের গড়া বোলিং লাইন আপে দারুণ গুরুত্বপূর্ণ এক সদস্য এই জাম্পা। অস্ট্রেলিয়া তো বটেই, পুরো আসরের অন্যতম সেরা বোলারই যে তিনি। কিন্তু নীরবেই নিজের কাজটা করে যান এই লেগি। আগামীকালের ফাইনালে গাপটিল, উইলিয়ামসন, নিশামদের রানের পাহাড় গড়তে না দেয়ার প্রধান দায়িত্বটি অ্যারন ফিঞ্চ অবশ্যই দেবেন দলের ছোটখাটো গড়নের এই লেগস্পিনারকে। সুপার টুয়েলভের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিই কেবল নন, বুদ্ধিমত্ত্বা ও শক্তির জায়গাকে কাজে লাগানোয় জাম্পা নিজেকে আরও বিশেষ করে মেলে ধরেছেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রুদ্ধশ্বাস সেমিফাইনালে।
ক্রিকেটের অন্যতম আকর্ষণীয় শিল্প লেগস্পিন। তবে অ্যাডাম জাম্পার লেগস্পিনের ধরন কিছুটা হিসেবি। উচ্চতায় কিছুটা খাটো হবার কারণে তার বল স্কিড করে বেশি, বলের নিয়ন্ত্রণও তার শক্তির প্রধান জায়গা। এর সাথে এমন লেংথে বল করে থাকেন যে, সপাটে বাউন্ডারি হাঁকানোও হয়ে যায় কষ্টসাধ্য ব্যাপার। দারুণ ইকোনমি রেটের সাথে চলতি আসরে জাম্পার কার্যকারিতা প্রকাশ করবে আরেকটি তথ্য, সর্বাধিক উইকেট শিকারির তালিকায় ৬ ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার পরের নামটিই জাম্পার। হাসারাঙ্গা অবশ্য জাম্পার চেয়ে খেলেছেন বেশি ম্যাচ। সুপার টুয়েলভে আবার জাম্পাই আছেন সবার উপরে।
নিজেকে অবমূল্যায়িত ভাবেন অজি লেগস্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। ক্রিকইনফোকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমি সব সময়ই অবমূল্যায়িত হয়েছি। সব সময়ই আমার চারপাশে আমার চেয়ে ভালো লেগস্পিনার দেখে এসেছি। এমনকি আমার শহরেই, আমার পাড়াতেই আমার চেয়ে লেগস্পিন ভালো করতো এমন বোলার ছিল। তবে আমি এরমধ্যেই পারফর্ম করে যেতে চাই। কারণ, কেউ পাত্তা না দিলেই আমি ভালো খেলি।
আগামীকালের ফাইনালে কিউইদের পক্ষে আছেন লেগি ইশ সোধি। তবে জাম্পা নিশ্চয়ই খুশি হবেন এটা ভেবে যে, কিউই ব্যাটিং লাইন আপে স্পিনের বিরুদ্ধে অন্যতম স্বচ্ছন্দ ব্যাটার ডেভন কনওয়ে থাকছেন না এই ম্যাচে।
Leave a reply