অভিনব ‘বিকাশ’ প্রতারণা: ‌‘প্রবাসী ছেলে’ সেজে পরিবারের কাছ থেকে টাকা লুট

|

ছেলে সৌদি আরবে পড়াশোনা করতে গিয়েছেন। ফোনে সেই ছেলে সেজে অভিনয় করে এবং ভুয়া তথ্য দিয়ে বাবা-মায়ের ওপর চাপ তৈরি করে বিকাশ’র মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। সৌদি প্রবাসী এমন এক ছাত্র তার পরিবারের এমন প্রতারিত হওয়ার ঘটনা গতকাল সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।

যমুনা নিউজের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ মাহবুব মোর্শেদ তারেক নামে ওই ছাত্রের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পুলিশের কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়া র‌্যাবের কাছেও লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে।

তারেক আরও জানান, যে দোকান থেকে তার বাবা টাকা বিকাশ করেছিলেন সেই দোকানের মালিক সহযোগিতা করছেন না।

বিকাশ বা অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অনেকেই নানা কায়দায় অভিনব প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। সচেতনতার জন্য তারেকের পোস্টটি (তার বানান রীতিতে) এখানে তুলে ধরা হল–

“ঘটনা হল, আজকে কে বা কারা বাসায় আব্বুর নাম্বারে ফোন করে বলেছে যে, আপনার ছেলে তারেক সৌদি আরবে তাঁর বন্ধু-বান্ধব নিয়ে জঘন্য এক কাজ করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। পুলিশ বেদম মার দেয়ার পর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এবং তাঁর এক বন্ধু আপাতত তাঁর সব খরচ দিয়ে দিচ্ছে, আপনি এক্ষুণি ওই বন্ধুর গার্ডিয়ানের নাম্বারে ৫০ হাজার টাকা বিক্যাশ করেন। অতচ আমি মাত্রই আসরের নামাজ পড়ে ভার্সিটিতে নিজের ডর্মে ঢুকলাম।

এবং এর মধ্যে ২-৩ বার কেউ একজন কাঁদো কাঁদো গলায় তারেক মানে ওনার ছেলে সেজে কথাও বলেছে। বলেছে যে, আমি যে কাজ করে ধরা পড়সি সেটা দেশে কেউ জানলে আমি সুইসাইড করবো। তাড়াতাড়ি টাকা পাঠিয়ে দেন।

তাঁর মানে এরা আমার নামও জানত এবং আমি যে সৌদি আরব থাকি সেটাও জানতো। আব্বুর অসুস্থতা, ট্রিট্মেন্ট, অবসর পরবর্তী অবস্থা, ছেলে একমাত্র আমি বাইরে – সব কিছু মিলিয়ে এমনিতেই আব্বুর শারীরিক মানসিক কোন অবস্থাই ভালো না। এই অবস্থায় ফোনে আমার এমন মরা কান্না শুনানো হয় তাকে যে, আব্বু আম্মাকে নিয়ে নিচে গিয়ে বহু কষ্টে ৩ টা নম্বরে ৪৫ হাজার টাকা বিকাশ করে দেন, যদিও এই মুহুর্তে আমাদের অবস্থা এত আহামরি কিছু না। আম্মুকে কিছু বুঝতে দেন নাই এই ভয়ে যে আম্মু বেহুঁশ হয়ে যাবে। শ্বাসকষ্টের জন্য যেখানে আব্বু নিচেই নামতে পারেনা, কাউকে কিছু না বলে সেখানে আম্মুকে নিয়ে নিচে রিকশা নিয়ে বিকাশ করা ! কেঁদে কেঁদে বুক ফেটে মারা যাওয়ার বাকি ছিল শুধু আমার এত অসুস্থ আব্বুর। পরে আমি বিকালে ফোন দেয়ার পর সব ধরা পড়ে।

বুঝা যাচ্ছে এটা এমন কেউই করেছে যে, আমার নাম জানে, কোথায় কি করি সেসবও জানে। ব্যাপার হল, টাকা হয়ত ফেরত পাওয়া যাবেনা, কিন্তু এই শরীরে এরা আমার অসুস্থ আব্বুকে যে পরিমান কষ্টে ফেলেছে, সেটা বর্ননার বাইরে। আমার কান্নার শব্দে বেহুঁশ হয়ে আমার কাছেও একটা ফোন করা হয়নি। আপাত দৃষ্টিতে খুব বোকার মত কাজ মনে হলেও এরা এমন ভাবেই ঘটনা সাজায় যাতে কেউ দম ফেলার ফুসরত পর্যন্ত না পায়।

এই নাম্বার থেকে ফোন এসেছিলঃ 01969 719 447
আর এই তিনটা নাম্বারে বিকাশ করা হয়েছেঃ
লেনদেনের সময়ঃ বিকাল ৪টা থেকে সাড়ে চারটার মধ্যে (২০ মার্চ, ২০১৮)।

01703 571 276 (১৫০০০ টাকা)
01775 964 025 (১৫০০০ টাকা)
01775 639 667 (১৫০০০ টাকা)

যেই দোকান থেকে বিক্যাশ করা হয়েছে তারা এখন আর ট্রাঞ্জেকশান আইডি আর যে নাম্বার থেকে টাকা পাঠানো হয়েছে সেগুলো দিচ্ছেনা। বলে, মেসেজ ডিলিট করে দিয়েছে।

টাকা উদ্ধার না হোক , যদি সম্ভব হয়, তথ্যটা সঠিক জায়গায় প্লেস করে কিছু একটা করিয়েন যাতে এই প্রতারকদের কিছুটা প্রায়শ্চিত্ত হয়। এইভাবে করে মানুষকে কষ্ট দেয়া।

আর এখুনি নিজ বাসায় সবাইকে জানিয়ে দেন যাতে এরকম ফোনের পাল্লায় পড়ে এভাবে প্রতারিত হতে না হয়। অন্তত এরকম মানসিক যন্ত্রণায় আর অশান্তিতে পড়তে না হয়। টাকা তো যাবেই কিন্তু আমাদের বয়স্ক আব্বা আম্মার উপর দিয়ে যে মানসিক যন্ত্রণাটা যায় সেটা তো বর্ননার বাইরে। যাই হোক, আলহামদু লিল্লাহি আলা কুল্লি হাল। আল্লাহ্‌ যে অবস্থাতেই রেখেছেন তার জন্য আলহামদুলিল্লাহ্‌।

#ফ্রেন্ডলিস্টে যারা আত্মীয়স্বজন আছেন, তারা আবার বাসায় ফোন দিয়ে ঝামেলা-কষ্ট বাড়ায়েন না প্লিজ।”


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply