‘ইস্টার সানডে’ উদযাপনের টাকা জোগাড়ের জন্যই রাজধানীর গুলশানে গারো মা-মেয়েকে নির্মমভাবে হত্যার করা হয়। হত্যার মূল ‘পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারী’ সঞ্জীব চিরানসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। বুধবার রাতে শেরপুরের নালিতাবাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। খুন হওয়া মা-মেয়ে হত্যার মূল হোতা সঞ্জীবের নানী ও খালা। মঙ্গলবার রাতে গুলশানের ৫৮/২ কালাচাঁদপুরের ছয়তলা বাড়ির চতুর্থ তলায় খুন হন সুজাতা চিরান (৪০) ও তার মা বেসেত চিরান (৬৫)।
সুজাতের গলাকাটা মরদেহ ঘরের একটি খাটের ওপর থেকে এবং মা বেসেতের মরদেহ পাশের ঘরের খাটের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর ভবনটির ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার সূত্র ধরে শুরু হয় তদন্ত। ফুটেজে দেখা যায়, দুই নারী খুনের কিছুক্ষণ আগে ভবনটিতে ঢুকেছিল ৪ তরুণ। ওই চার তরুণের একজন ছিলেন সুজাতার বোনের ছেলে সঞ্জীব।
আসামিদের হাজির করে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে খুনের ঘটনার আদ্যোপান্ত জানায় র্যাব। ১ মাস আগেই আসামি সঞ্জীব, শান্ত ও প্রবীণ তিন বন্ধু মিলে শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে বসে পরিকল্পনা করে তারা মহাসমারোহে ‘ইস্টার সানডে’ উদযাপন করবে। এজন্য, ঢাকায় থাকা আসামি সঞ্জীবের খালা সুজাতা চিরানের বাসা থেকে টাকা চুরি করার পরিকল্পনা করে তারা। সুজাতার পরিবারের সকলেই চাকুরীজীবী হওয়ায় তাদের নিকট থেকে ৫’/৬ লাখ টাকা সঞ্চিত থাকতে পারে বলে তারা ধারণা করে।
পরিকল্পিতভাবে ঘটনার দিন বাসা ফাঁকা থাকে এমন সময়ে সুজাতার সাথে দেখা করে আসামিরা। বাসায় বসে নাস্তা করে। এক পর্যায়ে সঞ্জীব তার খালা সুজাতাকে দু’শ টাকা দিয়ে ‘চু’ (দেশি মদ) আনতে বলে। ‘চু’ খাওয়ার সময় পরিকল্পতভাবে সুজাতাকে বেশি মদ খাইয়ে নেশাগ্রস্ত করে ফেলে।
এর পর বিকেল ৪.৩০’র দিকে তারা চুরির জন্য উদ্যত হলে সঞ্জীবের নানী বেসেত চিরান হঠাৎই বাসায় আসে। খাটের ওপর বসে তাদের সাথে গল্প করতে থাকে। চুরি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দেখে রাজু ও প্রবীণ বৃদ্ধা বেসেতের পা চেপে ধরে, শান্ত বেসেতের মুখে বালিশ চাপা দেয়, আর সঞ্জীব গলায় ওড়না পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
এরপর তারা মদ্যপ সুজাতাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। আসামি রাজু তাকে বালিশ চাপা দেয় আর সঞ্জীব ও শান্ত ছুরি দিয়ে পাজরে আঘাত করতে থাকে। এক পর্যায়ে সঞ্জীবে ছুরি দিয়ে গলা কেটে তাকে হত্যা করে।
মা-মেয়ের মৃত্যু নিশ্চিত করার পর আসামিরা বাসা তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোনো টাকা পয়সা পায়নি। আনুমানিক ৫টা ১৫ মিনিটে তারা বাসার দরজা বাহির থেকে আটকে বের হয়ে যায়। এরপর তারা শ্যাওড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে আবদুল্লাহপুর যায়। সেখান থেকে যায় শেরপুরের নলিতাবাড়ি। নলিতাবাড়িতে তারা অবৈধভাবে ভারত যাতায়াতকারী ‘মোস্ত’ নামের এক দালালের সাথে দেখা করে। তার মাধ্যমে ভারত যাওয়ার পরিকল্পনায় তারা সেখানে অবস্থান করে। সেখান থেকেই গ্রেফতার করা হয় তাদের।
যমুনা অনলাইন: টিএফ
Leave a reply