আগামী ২৩ ডিসেম্বর ৪র্থ ধাপে সিরাজদিখান উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ নভেম্বর। এরই মধ্যে প্রার্থীরা যে যার মতো করে জনসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাসাইল ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সাইফুল ইসলাম যুবরাজও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। তবে সম্প্রতি সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে তার একটি বিতর্কিত বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ।
গত ২৫ ও ২৬ অক্টোবর সাইফুল ইসলাম যুবরাজ ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কর্মীদের গরু জবাই করে খাওয়ানোর আয়োজন করেন। নিজ বাড়ি উত্তর পাথরঘাটার সে অনুষ্ঠানে তিনি বলেন-
“এই নির্বাচন পারপাসে একটা লোক মারা যেতে পারে, আমার কর্মী যারা তাদের একটা লিস্ট আছে। এই লিস্টটা করতাছি এই লিস্টটা আমার কাছে আছে। এই কর্মীদের ভিতরে যদি কেউ নির্বাচন করতে গিয়ে মারা যায়, তাহলে আমার পক্ষ থেকে ১০ লাখ টাকা তাদের পরিবারকে দেওয়া হবে।”
মৃত্যুর ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি সাইফুল ইসলাম যুবরাজ আহতদেরও দায়িত্ব নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, “যদি খুনাখুনি বাইরাবাইরি করে কেউ হাসপাতালে ভর্তি থাকেন, তাহলে আমি তার সম্পূর্ণ খরচ বহন করবো। এমনকি তার সংসারের খরচও আমি চালাবো। আমি মাইট্টা ধোরা সাপ। চুপ করে শুয়ে থাকি, আর যখন কামড় মারি তখন মাংসসহ ছিড়ে ফেলি।”
চেয়ারম্যান প্রার্থীর এমন উসকানিমূলক বক্তব্য নির্বাচনে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের। এ ব্যাপারে বাসাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী তাইফুর রহমান ডালু ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, বিষয়টি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেছি। সিরাজদিখান উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, এ বিষয়টি অনেকের কাছে শুনেছি। এলাকায় বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানতে হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাসাইল ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সাইফুল ইসলাম যুবরাজ বলেন, আমার ২৫ মিনিট ভিডিও বক্তব্যের ৬০ সেকেন্ড রেখে বাকি অংশ ডিলিট করে ফেসবুক ভাইরাল করেছেন আমার প্রতিপক্ষের লোকজন। আমি বলেছি ৮৭ সালে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৩ ব্যক্তি সহিসংতায় মারা যায়। ঐ ধরনের সহিসংতার কোনো ঘটনা আর ঘটতে দেওয়া হবে না, গ্রামবাসীকে এই বলে আশ্বস্ত করা হয়। তারপরও এলাকার লোকজন ঐ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে কী করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে আমি আমার পক্ষের লোকজনের মধ্যে মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবারকে এসব কথা বলেছিলাম। তবে ঐ সময় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়নি। আর এমন বক্তব্যে নির্বাচন আচরণবিধিও লঙ্ঘন হয়নি।
সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহিনা ইসলাম চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে সহিংসতা এড়ানোর জন্য আমরা কাজ করছি। ইউপি চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। তবে ভাইরাল হওয়া বক্তব্যের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
সিরাজদিখান থানার ওসি মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন বলেন, নির্বাচনে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেওয়া হবে না। তাই সবাইকে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার আহবান জানান ওসি। তিনি বলেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিও চিত্র পর্যবেক্ষণ ও উপস্থিত কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a reply