নৌকা প্রতীকের জন্য কেন্দ্রে গেল বিএনপির দুই সভাপতির নাম

|

পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনে উভয় পক্ষ।

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট:

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নির্ধারণ নিয়ে মির্জাগঞ্জের পর এবার পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বিএনপির দুই নেতার নাম আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। উপজেলার চাকামইয়া ইউনিয়নে তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে পাঠানো তিনজনের নামের তালিকায় প্রথমে রয়েছে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মকবুলের হোসেনের নাম এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোতালেব হাওলাদারের নাম। যা নিয়ে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ আর হতাশা বিরাজ করছে।

এদিকে বিএনপি নেতার নাম তালিকায় প্রথমে রাখার প্রতিবাদে স্থানীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতির স্ত্রী। অপরদিকে মকবুল হোসেনকে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা দাবী করে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার ছেলে। পক্ষে-বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনসহ গোটা বিষয় নিয়ে গত দুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে কলাপাড়া প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন চাকামইয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি হুমায়ুন কবির কেরামত হাওলাদারের স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০০৫ সালে চাকামইয়া ইউনিয়ন বিএনপির ৯নং ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সভাপতি হিসাবে দলটির সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেছেন মোঃ মকবুল হোসেন দফাদার। তৎকালীন সময়ে কলাপাড়া উপজেলা বিএনপি কর্তৃক আয়োজিত জিয়াউর রহমানের ৩১তম শাহাদৎ বার্ষিকী উপলক্ষে একটি বিশেষ স্মরণিকা প্রকাশ করেন। ওই স্মরণিকায় দেখা যায়, মকবুল হোসেন ১নং চাকমইয়া ইউনিয়ন বিএনপির পক্ষ থেকে তার ছবিসহ ‘শাহাদৎ বার্ষিকীর এই দিনে জিয়া তোমায় মনে পড়ে’ এরকম একটি শুভেচ্ছা বানী জানান।

এরপর ২০১২ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন একটি মেজবান অনুষ্ঠানে বসে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে দলের ত্যাগী নেতা বনে যান এ বিএনপি নেতা। এর পুরস্কার হিসেবে ২০১৩ সালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের গঠিত কমিটিতে সহ-সভাপতি
হিসেবে দায়িত্ব পান মকবুল হোসেন।


লিখিত বক্তব্যে হোসনেয়ারা বেগম আরও বলেন, কাউন্সিল ছাড়া তৎকালীন স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্দেশে ওই কমিটিতে সহ-সভাপতির পদ পায় মকবুল হোসেন দফাদার। মূলত আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে নিজেদের মধ্যে অন্তঃকলহ সৃষ্টি করার জন্য বিএনপির সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেনকে ইউনিয়ন পরিষদ কাউন্সিলে চেয়ারম্যান পদে অংশ গ্রহণের সুযোগ দিয়ে ত্যাগী নেতাকর্মীদের ক্রমশ দূরে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।


তিনি বলেন, যেহেতু চাকমইয়া ইউনিয়নটি বিএনপি-জামায়াতের ঘাটি হিসেবে পরিচিত, সেহেতু তৃণমূলের ভোটে বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি হুমায়ুন কবির কেরামতকে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে বসিয়ে কেন্দ্রে নাম পাঠানো হয় ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মোতালেব হাওলাদারের নাম, তিনজনের তালিকায় দুইজনই বিএনপি নেতা। এ কারণে এলাকায় ত্যাগী নেতাদের মধ্যে ক্রমশ ক্ষোভ বাড়ছে বলে জানান হোসনে আরা বেগম।

যোগাযোগ করা হলে বিএনপি করার কথা অস্বীকার করে মুঠো ফোনে মকবুল হোসেন দফাদার জানান, বিএনপির যে কমিটির তালিকা ও স্মরণিকায় তার যে ছবি ও নাম প্রকাশ করা হয়েছে সেটি ষড়যন্ত্রমূলক। তিনি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত আছেন।

তাহলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি যে স্বীকার করছেন যে আপনি বিএনপির সক্রিয় নেতা ছিলেন, তাহলে সেটা কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটা তার বিষয়। এই বলে ফোন কেটে দেন মকবুল হোসেন দফাদার।


কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব তালুকদার জানান, মকবুল হোসেন দফাদার এক সময়ে বিএনপি করতো। পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে, এটা সত্য। তৃণমূলের ভোটে প্রথম হওয়ায় তার নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
তিনি জানান, দলীয় কাউন্সিলে মকবুল হোসেনের প্রাপ্ত ভোট ২৭, হুমায়ুন কবির কেরামত ২১ ভোট, মোতালেব হাওলাদার ৮ ভোট এবং অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান চুন্নু পেয়েছেন ১ ভোট। এখন দলীয় মনোনয়ন কে পাবেন এ বিষয়টি সিদ্ধান্ত নিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


অপরদিকে মকবুল হোসেন হাইব্রীড নয় আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা- দাবী করে বুধবার সকালে কলাপাড়া প্রেসক্লাবে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে করেন তার ছেলে ফেরদৌস হাওলাদার। লিখিত বক্তব্যে তিনি দাবী করেন, তার বাবাকে যারা হাইব্রীড বলছেন বরং তারাই দল থেকে বহিস্কৃত এবং ভিজিএফের চাল আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। কোন উপায় না পেয়ে বরং তারা তৃণমূলে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া তার বাবার নামে মিথ্যা অভিযোগ আনছেন। তিনি আশা করছেন, তার বাবাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নৌকা প্রতীক দিয়ে এলাকার উন্নয়ন করার সুযোগ দিবে।


তবে বিএনপি করার বিষয়টি নিশ্চিত করে কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক ও কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এবিএম মোশাররফ হোসেন মুঠোফোনে জানান, ২০১২সালের আগ পর্যন্ত ওই ইউনিয়নে মকবুল হোসেনের মত বিএনপির একনিষ্ঠ ত্যাগী নেতা ছিলো না বললেই চলে। উপজেলা বিএনপির সকল কর্মকান্ডে ওই ইউনিয়ন থেকে মকবুল হোসেন
সক্রিয় ছিল। তারপর হঠাৎ করেই সে ২০১২ সালের দিকে বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply