বিতর্কিত ৩ কৃষি বিল নিয়ে কৃষক-অসন্তোষের জের ধরে শুক্রবার জনসমক্ষে এসে দুই হাত জোড় করে মাফ চাইলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুক্রবার গুরু নানকের জন্মদিন উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি জানান, আসন্ন পার্লামেন্টের শীতকালীন অধিবেশনে ঐ তিন কৃষি বিল বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু হবে। সেইসঙ্গে সবকিছু ‘নতুনভাবে শুরু করতে’ আন্দোলনরত কৃষকদের ঘরে ফেরার আহ্বানও জানান তিনি।
তবে ক্ষমতায় আসার পর এটিই মোদির প্রথম হাতজোড় করে মাফ চাওয়া নয়। এর আগে গত বছর করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় লকডাউন দেয়ার পর জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিনি বলেন, এই কঠিন পদক্ষেপ আপনাদের জীবনে অনেক সমস্যা ডেকে এনেছে। বিশেষ করে গরিব মানুষের। তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। জানি আপনাদের মধ্যে কিছু মানুষ আমার এই সিদ্ধান্তে অখুশি হয়েছিলেন। কিন্তু এই পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করতে এই সিদ্ধান্ত নিতেই হতো।
অবশ্য করোনার সময় মাফ চাওয়ার প্রেক্ষিতটির চেয়ে বর্তমান প্রেক্ষিতটি অনেক বেশি রাজনৈতিক। কেননা ইতোপূর্বে কৃষক আন্দোলনে বিজেপি নেতাদেরকে কৃষক-বিরোধী উত্তপ্ত বক্তব্য দিতে ও প্রশাসনকে হার্ডলাইনে যেতে দেখা গেছে। প্রাণও গেছে কয়েকশ’ কৃষকের। তাই অনড় অবস্থান ভেঙে কৃষকদের দাবি মেনে নিয়ে মাফ চাওয়াকেও মানা হচ্ছে আগেরবারের চেয়ে বেশি তাৎপর্যপূর্ণ।
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী বছরের শুরুতেই পাঞ্জাব ও উত্তর প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন। মূলত কৃষকদের ভোট পেতেই সরকারের এই কৌশল। যেহেতু কৃষক আন্দোলনও ঘনীভূত হয়েছে মূলত পাঞ্জাবেই, সেহেতু পাঞ্জাবের প্রবাদপুরুষ গুরু নানকের জন্মদিনকেই হাতজোড়ের মোক্ষম সুযোগ হিসেবেই নিয়েছেন তিনি, এমন অভিমত উল্লিখিত হয়েছে আনন্দবাজারের একটি প্রতিবেদনে।
উল্লেখ্য, গেলো বছর সেপ্টেম্বরে বিতর্কিত ৩টি বিল সংশোধনের মাধ্যমে আইনে পরিণত করা হয়। এরপর থেকেই দিল্লি-পাঞ্জাব-হরিয়ানা-উত্তর প্রদেশ-রাজস্থানে শুরু হয় আইনগুলো বাতিলের দাবিতে তীব্র আন্দোলন।
এর আগে শুক্রবারে জাতির উদ্দেশে দেয়া ঐ ভাষণে আক্ষেপ করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, আমি আন্তরিকভাবে ও শতভাগ শুদ্ধমন নিয়েই বলতে চাই, হয়তো আমাদের প্রচেষ্টাতেই কোনো খামতি ছিল। এজন্যই বাতির আলোর মতো সত্যকেও আমরা কৃষকদের বোঝাতে পারিনি!
Leave a reply