নায়িকা হতে মুম্বাই গিয়ে ১৭ বছর বয়সেই হয়েছিলেন দুই ছেলের মা!

|

ঊর্বশী ঢোলাকিয়া। ছবি: সংগৃহীত।

জনপ্রিয় নারী নেতিবাচক (নেগেটিভ) চরিত্রের মধ্যে অন্যতম একতা কাপূরের ‘কসৌটি জিন্দেগি কে’ ধারাবাহিকের কমলিকা বসু। কমলিকার চরিত্র আজও দর্শকের মনে গেঁথে আছে। পর্দায় কমলিকা সব সময়ই পরিকল্পনা করতেন অন্যের জীবনের শান্তি ছিনিয়ে নেওয়ায়। কমলিকার বাস্তব জীবন কিন্তু ছিল যথেষ্ট যন্ত্রণাদায়ক। খুব কষ্টে উপার্জন করে সংসার চালিয়েছিলেন তিনি। স্কুলে পড়ার সময় নিজের সন্তানদের মানুষ করতে পড়াশোনা ছাড়তে হয়েছিল তাকে।

তিনি ঊর্বশী ঢোলাকিয়া। গাঢ় লিপস্টিক, কপালে কুমকুম আর বাহারি শাড়িতে সেজে যখনই পর্দায় আসতেন তিনি, ভেসে উঠত সুর ‘ক-ম-লি-কা’! ‘কসৌটি জিন্দেগি কে’র কমলিকা চরিত্রের মাধ্যমেই নজরে পড়েছিলেন তিনি।

খুব ছোট বয়স থেকেই অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছা ছিল তার। মাত্র ছয় বছর বয়স থেকে ইচ্ছেডানায় ভর করে উড়তে শুরু করেছিলেন ঊর্বশী। প্রথমে একটি নামী সংস্থার বিজ্ঞাপনে টেলিভিশনে দেখা যায় তাকে। তারপর টিভি ধারাবাহিক ‘শ্রীকান্ত’-এ শিশু শিল্পী হিসাবে অভিনয়।

আর একটু বড় হতেই সুযোগ পেয়ে যান টেলিভিশনের অন্য একটি ধারাবাহিকে। নাম ‘দেখ ভাই দেখ’। তারপর একাধিক ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন তিনি। অভিনয় এবং পড়াশোনা দু’টিই সমান ভাবে চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বিষয়টা কঠিন ছিল কিন্তু ঊর্বশী তখনও জানতেন না তার জন্য আরও কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।

১৯৯৩ সালে ‘দেখ ভাই দেখ’ ধারাবাহিকে অভিনয় করার সময় থেকেই এক ব্যক্তির প্রেমে হাবুডুবু খেতে শুরু করেছিলেন তিনি। বাড়ির অমতে ১৬ বছর বয়সে তাকে বিয়ে করে নেন ঊর্বশী। কিন্তু বিয়ের পর তার উপর যে মানসিক নির্যাতন চলত, তা কোনও ভাবেই মেনে নিতে পারতেন না তিনি। এই পরিস্থিতির মধ্যেই মাত্র ১৭ বছর বয়সে ঊর্বশী যমজ সন্তানের জন্ম দেন।

আর তার এক বছরের মধ্যেই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ঊর্বশী তখন মাত্র ১৮ বছরের কিশোরী। এই বয়সে সন্তানরা পুরোদস্তুর মা-বাবার উপর নির্ভরশীল থাকে সাধারণত। অথচ ঊর্বশীর ঘাড়েই তখন দুই সন্তানের দায়িত্ব।

স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর মা-বাবার কাছেই থাকতে চলে যান তিনি। তার বাবাও তখন কাজ থেকে অবসর নিয়েছিলেন। এমন অবস্থায় একা বাবার উপর সংসারের সব দায়িত্ব ছেড়ে বাড়িতে বসে থাকা সম্ভব ছিল না তার। বাধ্য হয়েই দুই দুধের শিশুকে ফেলে আবার কাজ খুঁজতে শুরু করেন।

ধীরে ধীরে নিজের পায়ের তলার জমি শক্ত করেছেন তিনি। নিজের দুই ছেলের সমস্ত খরচ একা মা হয়ে বহন করেছেন। আর্থিক অনটনেও ভুগতে হয়েছে অনেক সময় তাকে। সেই সব দিন কঠোর পরিশ্রম করে সামলেছেন একা। আর সামাজিক কটূক্তি তো ছিলই। কখনও প্রতিবাদ করেছেন, কখনো চুপ থেকে নিজের কাজ দিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা চালিয়েছেন।

ঊর্বশীর বয়স এখন ৪৩। অভিনয় শিল্পে আছেন ৩৩ বছর ধরে। এখনো সক্রিয় ভাবে কাজ করেছেন। মাত্র আঠেরো বছর বয়স থেকেই ঊর্বশী একা মানুষ করেছেন দুই ছেলে সাগর আর ক্ষিতীশকে। এত অল্প বয়স থেকে একা একা সন্তানদের মানুষ করা বেশ কঠিন কাজ বলে মনে হলেও তা নিয়ে ভাবতে চান না এই অভিনেত্রী।

তার মতে, ‘পুরোটাই নির্ভর করছে আপনার দৃষ্টিভঙ্গির উপরে। কঠিন ভাবলে কঠিন। কিন্তু আমার পাশে সব সময়ে পরিবার ছিল। মা-বাবা, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী সকলে। তাই কাজটা কঠিন বলে ভাবতেই চাইনি।’

ঊর্বশীর দুই ছেলেও অভিনেতা হতে চান। দুই ছেলের কাছে ঊর্বশী একজন প্রকৃত যোদ্ধা। ছেলেরা চান মা এবার নিজের জীবন নিয়ে ভাবুক। মা নিজের জীবনসঙ্গী খুঁজে নিক। তবে এখনো সে সব নিয়ে ভাবার সময় পাননি তিনি। ছেলেদের পাশে থাকাতেই তার ভাল থাকা।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply