যুক্তরাষ্ট্রে এসে পৌঁছানোর আগেই মোহাম্মদ বিন সালমান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে ইরান যদি কখনও পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রেও পরিণত হয়, সৌদি আরব তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতায় নামবে না।
আর যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসও সৌদি আরবে সামরিক সাহায্য বন্ধের প্রস্তাবটি প্রত্যাখানের মাধ্যমে সৌদি যুবরাজের অবস্থানের প্রতি তাদের সায় জানিয়েছে। প্রস্তাবটি আনা হয়েছিল ইয়েমেনে সৌদি আরব যে যুদ্ধ চালাচ্ছে তার প্রতিবাদে।
কিন্তু হোয়াইট হাউসের বৈঠকের আলোচ্যসূচীতে যত গুরুত্বপর্ণ বিষয়ই থাক, সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বৈঠকটি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি কারণে।
এতে টেবিলের বিপরীত দিকে দুই নেতা যাদের নিয়ে বৈঠক করছেন, তাদের সবাই পুরুষ, কোন পক্ষেই একজনও নারী কর্মকর্তা নেই।
তবে দুই দেশের প্রতিনিধিত্বকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে কোন নারী দেখা না গেলেও ভিড় করা সাংবাদিকদের মধ্যে একজন নারী সাংবাদিককে দেখা যাচ্ছে।
ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এতটাই বিতর্ক সৃষ্টি করেছে যে টুইটারে এটি নিয়ে এক পোস্ট শেয়ার করা হয়েছে দশ হাজার বার।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার টিমে নারীদের অনুপস্থিতির জন্য এবারই যে প্রথম সমালোচনার মুখে পড়েছেন তা নয়। এর আগেও এ নিয়ে তার সমালোচনা হয়েছে।
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে একটি ছবি একই ভাবে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল যুক্তরাষ্ট্রে। ওই ছবিতে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি বিলে সই করছেন, যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোকে গর্ভপাত এবং এ সংক্রান্ত কর্মসূচির জন্য তহবিল দেয়া বন্ধ করে দেবে যুক্তরাষ্ট্র।
আর ছবিতে যারা তাকে ঘিরে রেখেছেন, তাদের সবাই পুরুষ। একজন নারীকেও সেখানে দেখা যাচ্ছে না।
সমালোচকরা তখন বলেছিলেন, মেয়েদের শরীরের ব্যাপারে এরকম গুরুতর একটি সিদ্ধান্ত যারা নিচ্ছেন, তারা সবাই পুরুষ!
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টাদের একজন তার কন্যা ইভাংকা ট্রাম্প অবশ্য আগে সৌদি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেছেন। কিন্তু গত ২০ মার্চ হোয়াইট হাউসের বৈঠকে তারও দেখা মেলেনি।
সৌদি আরবের ব্যাপার অবশ্য একেবারেই ভিন্ন। একেবারেই রক্ষণশীল একটি দেশ এটি। কিন্তু মোহাম্মদ বিন সালমান নিজেকে একজন সংস্কারপন্থী হিসেবে দেখাতে চাইছেন। বিশেষ করে মেয়েদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে।
গত বছর সৌদি রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারী হওয়ার পর তিনি মেয়েদের পক্ষে বিশেষ কিছু পদক্ষেপও নিয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত সিদ্ধান্তটি হচ্ছে মেয়েদের গাড়ি চালানোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া।
সৌদি আরবে তিনি মেয়েদের জন্য ফুটবল খেলা দেখার সুযোগও খুলে দিয়েছেন। অভিভাবকদের অনুমতি ছাড়া মেয়েদের ব্যবসাও করতে দেয়া হচ্ছে।
কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, নারীর সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সৌদি আরব এখনো বহুদূরে। হোয়াইট হাউসের ছবিটি তারই একটি উদাহারণ।
তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ কেউ এমন যুক্তি দেয়ার চেষ্টা করছেন যে এই একটি মাত্র ছবিকে সৌদি আরবে নারী-পুরুষের অসাম্যের প্রমাণ হিসেবে দেখা ঠিক হবে না।
Leave a reply