মরণব্যাধি ছেলের, বাড়িতেই দুর্লভ ‘ওষুধ’ তৈরি করলেন বাবা!

|

ছবি: সংগৃহীত।

মাত্র দু’টি বসন্ত পেরিয়েছে সন্তানের। তবে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সামনের বসন্তটি হয়তো আর দেখা হবে না ছোট্ট হাওইয়াংয়ের। হাতে খুব বেশি হলে আর কয়েক মাস। দুরারোগ্য মেঙ্কস সিনড্রোমে আক্রান্ত ওই শিশুর প্রাণশক্তি ধরে রাখতে পারে যে ওষুধটি, পুরো দেশেই তা নেই। আর দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসার ক্ষেত্রে বড় বাধা করোনা মহামারি। এমন অবস্থায় ছেলের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ তৈরি করতে মরিয়া হাওইয়াংয়ের বাবা জু ওয়েই বাড়িতেই বানিয়ে ফেলেছেন গবেষণাগার। নিজেই ওষুধ তৈরি করে খাওয়াচ্ছেন ছেলেকে।

চিনের কুনমিং শহরে বাড়িতেই গবেষণাগার তৈরি করা নিয়ে ৩০ বছর বয়সী জু ওয়েই বলেন, ভাবার সময় ছিল না। যা করার করতে হত। মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক বিকাশের জন্য শরীরে কপার বা তামা জরুরি। তবে হাওইয়াং যে রোগে আক্রান্ত, তাতে এই কপার ঠিক মতো তৈরি করতে পারে না তার শরীর। ফলে তার বছর তিনেকের বেশি বাঁচা কঠিন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

কিন্তু হাল ছাড়তে নারাজ বাবা জু। শিক্ষাগত যোগ্যতা হাইস্কুল পর্যন্তই। হাওইয়াং অসুস্থ হওয়ার আগে অনলাইনে ছোট ব্যবসা চালাতেন জু ওয়েই। এখন তার ধ্যান-জ্ঞান একটাই ছেলেকে ‘লড়াইয়ের সুযোগটা অন্তত দিতে চাই’। ছেলেকে কোলে নিয়ে মধু মেশানো পানি খাওয়াতে খাওয়াতে জু বলেন, আমার ছেলে নড়তে বা কথা বলতে পারে না ঠিকই, তবে ওর মধ্যে জীবন আছে, আবেগ আছে।

যখন তিনি বাড়িতেই গবেষণাগার বানানোর সিদ্ধান্ত নেন, তখন কেউ তার পাশে ছিল না। সবাই বলেছিল, ‘এটা অসম্ভব’। এক সময় ভাষা বাধা হয়ে দাঁড়ালেও তা হেরে যায় জুয়ের জেদের কাছে।

তিনি জানান, অনলাইনে মেঙ্কস সিন্ড্রোম নিয়ে যা তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল সবই ইংরেজিতে। অনুবাদ সফ্টওয়্যারের সাহায্যে তা পড়তে থাকেন জু। যখন বোঝেন ‘কপার হিস্টিডাইন’ ছেলের অবস্থা পরিবর্তনে সাহায্য করতে পারে, তখন দেরি না করে তার বাবার জিমেই ওষুধটি তৈরির প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম মজুত করে ফেলেন।

এখন নিয়মিত ছেলেকে বাড়িতে বানানো এই ওষুধটি খাওয়াচ্ছেন জু। তার দাবি, এই চিকিৎসা শুরুর দুই সপ্তাহ পর থেকে ছোট্ট হাওইয়াংয়ের দু’টি রক্তপরীক্ষার রিপোর্ট আবার স্বাভাবিক হয়েছে। এখনো কথা না বললেও তিনি গায়ে হাত বোলালে নাকি হাসি ফুটে উঠছে হাওইয়াংয়ের ঠোঁটে।

এতদিন বিরল এই রোগের চিকিৎসায় খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি ওষুধ প্রস্তুতকারীরা। হয়তো কম মুনাফাই এর কারণ, মন্তব্য করেন জু।

ছেলে যে নিজেই ওষুধ তৈরিতে হাত লাগাবে তা ভাবতে পারেননি জুয়ের বাবা। তিনি বলেন, প্রথমে ভেবেছিলাম মজা করছে।

টানা ছয় সপ্তাহ গবেষণায় ডুবে থাকার পর ওষুধের প্রথম ভায়ালটি তৈরি করেন জু। প্রথমে খরগোশ এবং তার পরে নিজের শরীরেও ওষুধটি প্রয়োগ করেন। খরগোশগুলির কিছু হয়নি, আমারও না, তার পর ছেলেকে ওষুধটি দেই, বললেন জু।

তবে এই ওষুধ যে রোগটির উপশম নয়, তা মনে করিয়ে দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। জু নিজেও অবশ্য তা স্বীকার করছেন। তা সত্ত্বেও লড়াইয়ের মাঠ ছাড়তে নারাজ জু। সন্তানের হৃদ্স্পন্দন ধরে রাখার এই যুদ্ধে নিজের অবস্থান মজবুত করতে ভবিষ্যতে মলিকিউলার বায়োলজি নিয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছে আছে।

জু বলেন, মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে দিতে পারি না ওকে। ব্যর্থ হলেও আমি চাই আমার ছেলের মধ্যে আশাটুকু অন্তত বেঁচে থাকুক।
সূত্র: এএফপি


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply