ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
ঘোষণার দশ বছর হয়ে গেলেও সিপাহী বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান নামে তাঁর গ্রামের নামকরণ বাস্তবায়ন হয়নি। এখনও তা কাগজে কলমে রয়ে গেছে।
স্বাধীনতার এত বছর পরেও অবহেলিত তাঁর গ্রাম। বছরের পর বছর সংস্কার না করার কারণে ধ্বসে পড়ার উপক্রম হয়েছিল সিপাহী হামিদুরের নামে বরাদ্ধকৃত বাড়িটিও। তবে তাতে এখন সংস্কারের কাজ চলছে । এদিকে ঘোষণার দশবছর পরও বাস্তবায়ন হয়নি এ বীরের নামে গ্রামের নামকরন খর্দ্দ খালিশপুর থেকে হামিদনগর। অবশ্য এই বীরশ্রেষ্ঠর নামে এলাকায় কলেজ, প্রাথমিক বিদ্যালয়, যাদুঘর ও লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি গ্রামের নামকরণ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক হামিদনগর নামে।
বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুরের মেজ ভাই হামজুর রহমান জানান, নিরবে নিভৃতে তার পরিবার পালন করে জন্ম-মৃত্যু দিবস, নেই সরকারী তেমন কোন উদ্যোগ। এই বীরের নামে মহেশপুরে নামে বরাদ্ধকৃত বাড়িটি এতদিন ছিল অযত্ন অবহেলায়। তবে সম্প্রতি গণপূর্ত বিভাগ ৬ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে বাড়িটির সংস্কার কাজ শুরু করেছে।
২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রামের নাম খর্দ্দ খালিশপুর থেকে হামিদনগর ঘোষণা ও গেজেট প্রকাশ হলেও বাস্তবায়ন হয়নি গ্রামের নামকরণ হামিদনগর । এলাকাবাসীর সচেতনতার অভাব আর অফিস আদালতগুলোর অবহেলায় লেখা হচ্ছে না হামিদনগর ।
প্রাক্তন সাংসদ এ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম চঞ্চল এখনও হামিদনগর নামকরণ বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান সরকারী ডিগ্রী কলেজ অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম জানান, তাঁর মতো বীরের নামে একটি গ্রাম প্রতিষ্ঠা করতে পারছি না আমরা এখনও, এটা দুঃখজনক। তিনি বীরশ্রেষ্ঠের নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানান সরকারের কাছে।
এদিকে স্থানীয় এসবিকে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আরিফান হাসান চৌধুরী জানান, সরকারী উদ্যোগ নিলে এটি বাস্তবায়ন হবে, তিনি বলেন, জমির দলিল সম্পাদন সহ নানা কাজে হামিদনগর লিখতে হবে তার পরিষদে নির্দেশনা এলে নাগরিক সনদ সহ নানা সেবা নিতে আসা লোকজনের কাগজে হামিদনগর লিখবেন।
ঝিনাইদহ-৩, মহেশপুর-কোটচাঁদপুর সংসদ সদস্য নবী নেওয়াজ বলেন, এ ব্যাপারে দ্রুত মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে যোগাযোগ করবেন। যা যা করা যায় আমি তাই করবো। আর এ ব্যাপরে স্থানীয়ভাবে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেন হামিদুর রহমান। হামিদুর মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের দক্ষিণ-পূর্বে কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই নামক স্থানে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন। ২৮ অক্টোবর রাতে ধলই এর যুদ্ধে অসীম সাহসিকতা প্রদর্শন করে শত্রুর গুলিতে শাহাদত বরণ করেন। পরবর্তীতে এই বীর সৈনিকের লাশ ধলই থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অন্তর্গত আমবাসা গ্রামে দাফন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকার জন্য তিনি সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত হন। পরে তার দেহবশেষ বাংলাদেশে আনা হয় এবং ২০০৭ সালের ১১ ডিসেম্বর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবি কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
Leave a reply