আগামীকাল বুধবার (৮ ডিসেম্বর) বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায় ঘোষণার কথা রয়েছে। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করবেন। মামলার ৬০ সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয় ৪ মার্চ। ২৫ আসামির মধ্যে কারাগারে থাকা ২২ জন নিজেদের নির্দোষ দাবি করে সাফাই সাক্ষ্য দেয়। আসামিদের বিরুদ্ধে আনা হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে দাবি করে সর্বোচ্চ শাস্তি হবে, এমন আশা করছেন আবরারের পরিবার ও আইনজীবীরা।
বুয়েটের তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়াকালীন ২০১৯ সালে ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয় আবরারকে। ৭ই অক্টোবর ভোররাতে আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয় বুয়েটের শেরে বাংলা হল থেকে। দেশের অন্যতম এই বিদ্যাপিঠে একজন শির্ক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাটি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। এরপর এই ঘটনার সাথে যুক্ত অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে মাঠে নামে সারা দেশের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ। আবরার হত্যার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পরে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে বুয়েট।
২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২১ জানুয়ারি তা আমলে নেয় আদালত। ১৫ সেপ্টেম্বর ২৫ আসামির বিরুদ্ধে গঠন হয় অভিযোগ। তবে করোনার কারণে সৃষ্ঠ অচলাবস্থা, রাষ্ট্রপক্ষের ভুলে পুনরায় অভিযোগ গঠন আর বিচারকের প্রতি আসামিপক্ষের অনাস্থার মতো কারণে বিচার বিলম্বিত হয়েছে বার বার।
৪ মার্চ শেষ হয় ৬০ সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ। আর কারাগারে থাকা ২২ আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করে সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছে। পলাতক থাকায় ৩ আসামি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পায়নি। ১৪ নভেম্বর শেষ হয় বিচার কাজ।
২০২২ সালের এপ্রিলে স্নাতক পাস করার কথা ছিল আবরারের। তাই মা-বাবার চাওয়া, যে সহপাঠী-বড়ভাইরা বিদ্যাপীঠে এমন ঘৃণ্য কাজ করেছে তাদের যেন উপযুক্ত শাস্তি হয়। আবরারের মা রোকেয়া খাতুন বলেন, সবার কাছে আমার আবেদন, প্রত্যেকের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয়। আর কোনো মাকে যেন অদূর ভবিষ্যতে সন্তান হারানোর কষ্ট পেতে না হয়।
আবরারের বাবা মো. বরকত উল্লাহ বলেন, ২০২২ সালের এপ্রিলে সে পাশ করে বের হতো। কিন্তু তার সে আশা আর পূরণ হলো না। তাই আমি চাইবো, এই রায়ের মাধ্যমে যেন অভিযুক্ত সবারই সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হয়।
হত্যা, হত্যার পূর্ব পরিকল্পনা ও খুনে অংশগ্রহণের যে তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে এর সবগুলোই প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আব্দুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ হতে আমাদের দাবি, সবাইকে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করার মাধ্যমে দৃষ্টান্ত তৈরি হোক।
তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন। আসামীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মদ বলেন, হলে অনেক সময় বহিরাগতদের আনাগোনা থাকে। তাই এই ঘটনাটির দায় কোনো বহিরাগতের হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
মামলার চার্জশিটে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে শিবির সন্দেহে আবরারের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মমভাবে পিটিয়ে তাকে হত্যা করে। চার্জশিটে আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান ওরফে মিজানকে হত্যার মূল হোতা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চার্জশিটে অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৯ জন এবং তদন্তে আগত ছয়জন রয়েছে। এছাড়া অভিযুক্তদের মধ্যে আটজন আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। এ মামলায় তিন আসামি পলাতক রয়েছে। এরা হলেন বুয়েট শিক্ষার্থী মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। বাকিরা কারাগারে।
এর আগে গত ২৮ নভেম্বর এই মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য্য করা হয়েছিল। রায় প্রস্তুতে আরও সময় প্রয়োজন বলে ৮ ডিসেম্বর রায় ঘোষণার পরবর্তী তারিখ ধার্য্য করে আদালত।
Leave a reply