সিরিয়াকে অস্থিতিশীল করতে বিদ্রোহী এবং জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকে গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্র সরবরাহ করছে যুক্তরাষ্ট্র। পেন্টাগনের নির্দেশে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে এ সব অস্ত্র পাঠানো হচ্ছে আসাদ বিরোধীদের কাছে।
কাতার ভিত্তিক গণ মাধ্যম আল জাজিরার বিশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য। ইউরোপে তৈরি এ সব অস্ত্র বিদ্রোহীদের হাতে পৌঁছাতে রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ।
ক্রোয়েশিয়ার জনাকীর্ণ বিমানবন্দর রিয়েকা-তে গভীর রাতে কার্গো বিমানে তোলা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রের বাক্স। গন্তব্য সৌদি আরব, কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ হলেও এ সব অস্ত্রের মূলত যাচ্ছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার বিদ্রোহী ও জঙ্গি গোষ্ঠিগুলোর কাছে।
ইউরোপে তৈরি এ সব অস্ত্রের চালানের পেছনে রয়েছে খোদ যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল আজিরা বিশেষ তদন্ত প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে কীভাবে ৩ বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে সিরিয়ান বিদ্রোহীদের হাতে মারণাস্ত্র পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যা ক্ষেত্র বিশেষে চলে গেছে আইএস জঙ্গিদের হাতেও।
বুলগেরিয়ার সাংবাদিক দিলিয়ানা গেতানজিয়েভা আল জাজিরাকে বলেন, “ক্ষেপণাস্ত্রের গায়ে দেখুন বুলগেরিয়ার সিল এবং কোড নাম্বার দেওয়া। এগুলো যে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ মিশন, সেটাও এই তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এমন সব অস্ত্র তো আর সরাসরি বিদ্রোহীদের হাতে তুলে দেয়া যায় না। তাই পেন্টাগন কাজে লাগায় তৃতীয় পক্ষকে। তেমনই একজন অস্ত্র ব্যবসায়ী অ্যাফ্রিমড ডিভোরেলি। যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে ৩ কোটি ডলার মূল্যের সমরাস্ত্র আলবেনিয়ায় সরবরাহের করার পর আততায়ীর হাতে মৃত্যু হয় তার। তবে বেঁচে যান তার ব্যবসায়িক অংশিদার ডেভিড পাকুস।
সাবেক এই অস্ত্র ব্যবসায়ী ডেভিড বলেন, “সংঘাতপূর্ণ এলাকায় অস্ত্র পাঠাতে তৃতীয় পক্ষকে ব্যবহার করে পেন্টাগন। পরে বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্র নিজের দায় এড়াতে ডিভোরেলিকে হত্যা করে। এ কাজে আলবেনিয়ার মাফিয়াদের ব্যবহার করেছে পেন্টাগন।”
মূলত সোভিয়েত ঘরানার অস্ত্রগুলোই ইউরোপের বিভিন্ন কারখানায় তৈরি করিয়ে পাঠানো হয়। এই তালিকায় অস্ট্রিয়া-বুলগেরিয়ার মতো দেশের তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র-রকেট এবং মাইনও রয়েছে। বিদ্রোহীদের এ সব অস্ত্রে প্রশিক্ষণের জন্য প্রাইভেট কন্ট্রাক্টরও ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র।
এ কাজে সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি বলেন, “এ সব অস্ত্রের প্রশিক্ষণের জন্য পেন্টাগন আমাদের মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠায়। এসব কাজ অত্যন্ত গোপনে কোনো রকম নথিপত্র ছাড়াই করা হয়। আমাদের কোনো নিরাপত্তা কিংবা বীমা থাকে না। একবার মিসাইল প্রশিক্ষণের সময় সেটা বিস্ফোরিত হলে আমার এক সহকর্মীর মৃত্যুও হয়।
সিরিয়ার বিদ্রোহীদের একটি বড় অংশ আইএসে যোগ দেওয়ায়, জঙ্গিদের হাতে চলে যায় এ সব অস্ত্র। পরে সেখানে আইএস বিরোধী অভিযান শুরু হলে এ সব অস্ত্রের কারণেই প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে মার্কিন সেনারা। অর্থাৎ পেন্টাগনের পাঠানো অস্ত্রেই প্রাণ গেছে অনেক মার্কিন সেনাদের।
যমুনা অনলাইন: এফএইচ
Leave a reply