২০১৫ সালে যখন ইয়েমেনে ‘অপারেশন ডিসাইসিভ স্টর্ম’ শুরু হয়, তখন সৌদি ও তার মিত্ররা বলেছিলেন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ‘উদ্দেশ্য হাসিল’ করে ফিরে আসবেন। কিন্তু আজ তিন বছর পার হলো, ‘উদ্দেশ্য হাসিল’ তো দূরের কথা, উল্টো ইয়েমেন থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজে পাচ্ছেন না সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।
সর্বশেষ গত রোববার রাতে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের ছোঁড়া এক ঝাঁক মিসাইল আঘাত হানে সৌদি রাজধানী রিয়াদসহ বেশ কয়েকটি শহরে। এই প্রথমবারের মতো কোনো মিসাইল সৌদিতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটায়। রিয়াদে নিহত হন এক মিশরীয় প্রবাসী নাগরিক।
হুথিদের মিসাইল হামলা এখন নিয়মিত বিষয়। শুধু তাই নয়, ইয়েমেনের ভেতরে উল্লেখযোগ্য কোনো অর্জন নেই সৌদি সেনা ও তাদের মিত্রদের। মধ্যখান দিয়ে প্রতিদিনিই মারা যাচ্ছেন ইয়েমেনের সাধারণ নাগরিকরা। কোথাও সৌদি বিমান হামলায়, আবার কোথাও অবরোধের কারণে সৃষ্ট খাদ্য ও পানীয়ের অভাবে তৈরি হওয়া দুর্ভিক্ষে।
জাতিসংঘের তথ্য মতে, দেশটির দুই তৃতীয়াংশ মানুষ আমদানিকৃত সরবরাহের উপর নির্ভরশীল৷ সৌদি হামলা ও অবরোধের কারণে ২ কোটিরও বেশি মানুষের মানবিক সাহায্যের ওপর মুখাপেক্ষী। এবং তাদের মধ্যে ৭০ লাখ ‘প্রায় দুর্ভিক্ষের’ কবলে রয়েছে৷
সামরিক কোনো অর্জন নেই, পাশাপাশি নৈতিকভাবে বলতে গেলে ইয়েমেনে পরাজিত হয়েছে সৌদি ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। প্রতিদিন সংবাদমাধ্যমে ইয়েমেন কেন্দ্রিক নেতিবাচক খবরের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বিন সালমানকে।
সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে ইয়েমেনকে তাই ‘সৌদি আরবের ভিয়েতনাম’ বলে অভিহিত করেছেন নাবিল আনসারি নামে ফ্রান্সের এক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। মিডলইস্ট আই’ নামক সংবাদমাধ্যমে ফ্রেঞ্চ ভাষা থেকে অনুদিত তার এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ইয়েমেন অভিযান সৌদি আরবের জন্য এমনই এক লজ্জাজনক পরিস্থিতি বয়ে নিয়ে এসেছে যেমনটি ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে এসেছিলো আমেরিকার জন্য।
ভিয়েতনাম যুদ্ধ শেষ হয়েছে আজ থেকে ৪০ বছর আগে। দিনটি ছিল ১৯৭৫ সালের ৩০ এপ্রিল। ১৯৫৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে শুরু করে ১৯ বছর ৫ মাস ৪ সপ্তাহ ১ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয় এই যুদ্ধ। প্রায় দুই যুগ স্থায়ী এই যুদ্ধে প্রাণ হারায় ভিয়েতনামের ৩০ লাখ লোক। এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ৫৮ হাজার সেনা নিহত হয়। আধুনিক পরাশক্তির কোনো দেশের জন্য তার সেনাদের এত বড় প্রাণহানির ঘটনা বিশ্বে এটিই প্রথম। এ ছাড়া পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র কোনো একটি পক্ষে যুদ্ধ করে হেরে যাওয়ার নজিরও ভিয়েতনাম যুদ্ধ।
Leave a reply