খোদ খ্রিস্টানরাই নিষিদ্ধ করেছিল ক্রিসমাস!

|

ছবি: সংগৃহীত

২৫ ডিসেম্বর, সারা বিশ্বে পালিত হয় বড়দিনের উৎসব। নানা আয়োজন ও হাসি-আনন্দে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় এই উৎসব উদযাপিত হয়। গির্জায়-গির্জায় হয় প্রার্থনা। সেই সাথে যিশু খ্রিস্টের জন্মদিনকে ঘিরে পুরো ডিসেম্বর মাসজুড়েই মানুষ মেতে থাকে আনন্দে। তবে সব সময়ই এমনটা ছিল না। খোদ খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদেরই দাবির মুখে আমেরিকা ও ব্রিটেনে ক্রিসমাস পালন আইন করে বন্ধ করা হয়েছিল!

প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টানরা যিশুর জন্মতারিখ ঘিরে আনন্দ উদযাপনকে পাপ মনে করতো। এসব উদযাপনের মধ্যে থাকা বিভিন্ন রীতির মাঝে প্যাগানদের প্রভাব ছিল বলে মত প্রকাশ করেন নীতিবাগীশ খ্রিস্টানরা। প্যাগান বা পৌত্তলিকদের ধর্মচর্চার ছোঁয়া পেয়েছিলেন তারা। তাই ১৬৪৩ সাল থেকেই এই দিনের উদযাপন বন্ধ করার কথা জোরেশোরে উঠতে থাকে। তারপর, ১৬৪৪ সালে ব্রিটেনে ক্রিসমাস উদযাপনকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শুধু নিষেধাজ্ঞাই নয়, তা কঠোরভাবে পালনেও জোর দেয় পার্লামেন্ট। দোকান, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান যদি কেউ বন্ধ রাখতো তবে সেজন্য জেল-জরিমানার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছিল আইনে। ক্রিসমাস উদযাপন বন্ধের এই সিদ্ধান্ত বলবত ছিল ১৬৬০ সাল পর্যন্ত।

যিশু খ্রিস্টের জন্মের সময় নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। ছবি: পিপল ম্যাগাজিন

শুধু ব্রিটেনই নয়, আমেরিকার প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টানদের আপত্তির মুখে এই উৎসবকে ধর্মবিরোধী বলে আখ্যা দেয়া হয়, নিষিদ্ধ করা হয় ক্রিসমাস উদযাপন। আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে ১৬৫৯ থেকে ১৬৮১ সাল পর্যন্ত বলবত ছিল এই নিষেধাজ্ঞা।

ছবি: ডমিনিকানা জার্নাল।

তাছাড়া, ২৫ ডিসেম্বরকে যিশুর জন্মদিন হিসেবে মেনে নিতেও রাজি ছিলেন না অনেকে। কারণ, বাইবেলের কোথাও যিশু খ্রিস্টের জন্ম তারিখ উল্লেখ করা নেই বলে, ক্রিসমাসের উদযাপন নিষিদ্ধের দাবি ওঠে। তার সাথে থিওলজিস্টদের নানামত রাখে নানামাত্রিক প্রভাব। অনেকে বলেন, যিশুর জন্মের সময় শীতকাল ছিল না। বরং, সেটা ছিল বসন্তের মাঝামাঝি কোনো সময়। কারণ, যিশুর জন্মের সময়কার অনেক ছবিতেই ভেড়ার পালের উল্লেখ আছে। আর শীতের প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় ভেড়ার পালের থাকার কথাও নয়। একই যুক্তিতে অনেক গবেষক আবার যিশুর জন্মের উপযুক্ত সময় হিসেবে শরৎকালকেই বেছে নিতে চান।

এছাড়া পিউরিটান খ্রিস্টানদের মতে, যাদের কাছে প্রতিটি দিনই পবিত্র, তাদের আবার বিশেষভাবে পবিত্র দিনের কোনো দরকার নেই। ক্রিসমাস উপলক্ষে ছুটি বা উৎসবের যেকোনো আবেদনকেই খারিজ করে দেন তারা।

রোমান বংশোদ্ভুত দ্বিতীয় চার্লস ইংল্যান্ডের রাজসিংহাসন দখল করলে আইনি নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। কিন্তু ছুটির দিন হিসেবে ২৫ ডিসেম্বরকে মেনে নেয়া হয়নি সহজেই। শুধু তাই নয়, ১৮৫৬ সালে ইংল্যান্ডের সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ২৫ ডিসেম্বরকে উল্লেখ করার পরেও প্রায় পনেরো বছর ধরে বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই তা কার্যকর হয়নি। অবশ্য তারপর উনিশ ও বিশ শতক জুড়ে বড়দিন ক্রমশ খ্রিস্টধর্মের সীমানা অতিক্রম করে সারা পৃথিবীজুড়ে উৎসবে পরিণত হয়েছে।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply