মারা গেলেন শোয়েব আক্তারের মা

|

ছবি: সংগৃহীত।

পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস খ্যাত শোয়েব আক্তারের মা। শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত দুইটার সময় শোয়েব আক্তার নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্ট দিয়ে এ কথা জানান।

পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমার মা, আমার সবকিছু। তিনি আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছায় জান্নাতের উদ্দেশে আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেছেন’। এরপর তিনি জানাযা নামাজের সময় উল্লেখ করেছেন।

শোয়েব আক্তারের পোস্ট।

ভারতের এই লজ্জার দিনে পাশে দাঁড়ালেন শোয়েব আক্তার

প্রসঙ্গত, শোয়েব আক্তার যেমন একজন উঁচুমানের ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচিত, তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুটাও ছিল ঠিক সেরকমই প্রতিশ্রুতিময়। ১৯৯৭/৯৮ সালে ঘরের মাঠ রাওয়ালপিন্ডিতে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে তার টেস্ট অভিষেক হয়। ১৯৯৮ এর শীতে দক্ষিণ আফ্রিকাগামী টেষ্ট দলেও তার জায়গা হয়। যেখানে তিনি তিন টেস্টের সবগুলো ম্যাচ খেলার সুযোগ পান। এভাবে অল্পদিনের মধ্যেই পাকিস্তানের শক্তিশালী ফাস্ট বোলিং লাইনআপে তিনি নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করে নেন।

১৯৯৮ সালে পেশোয়ারে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার দলের বিপক্ষেও তিনি দলে ছিলেন। যে ম্যাচে অস্ট্রেলীয় ব্যাটার মার্ক টেলর অপরাজিত ৩৩৪* রান করেছিলেন। এমনই ভাল-মন্দ মিলিয়ে দারুণ প্রতিশ্রুতি জাগিয়ে দলে আসা শোয়েবের ক্যারিয়ারে প্রথম ৮ টেস্টে নামের পাশে উইকেট সংখ্যা ছিল মাত্র ১৮টি।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে শোয়েবের সমীহ জাগানীয়া পারফরমেন্সের শুরুটা হয় মূলত ১৯৯৯ সালে ভারতের বিপক্ষে একটি বিশ্বকাপ পূর্ববর্তী সিরিজ থেকে। পরবর্তীতে তিনি তার পারফরমেন্সের এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন শারজাহ এবং ১৯৯৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপেও। এই সময়ই তিনি তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে আলোচিত পারফরমেন্সটি করেন ১৯৯৯ সালের ভারত সফরে ভারতের বিপক্ষে।

২০০২ সালে তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাকিস্তান দলে ডাক পান এবং সাফল্য লাভ করেন। এ সময় শ্রীলঙ্কায় নিরপেক্ষ ভেন্যুতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেষ্ট ম্যাচে শোয়েব তার ক্যারিয়ার সেরা (৬/১১) বোলিং করেন। কিন্তু বিশ্বকাপে দলের খারাপ ২০০৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ পারফর্মেন্সের বলি হয়ে টুর্নামেন্ট শেষে অন্যদের সাথে তিনিও দল থেকে বাদ পড়েন। যদিও একই বিশ্বকাপে তিনি ইংল্যান্ড এর বিপক্ষে সর্বকালের সর্বোচ্চ গতিতে বল করার বিশ্ব রেকর্ড গড়েন।

পুনঃরায় ২০০৪ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাকে দলে ফেরানো হয়। কিন্তু একই বছর ভারতের বিপক্ষে সিরিজে তার শহর রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত শেষ টেষ্টে তার বিতর্কিত অসুস্থতার জন্য তাকে বেশ ঝামেলায় পড়তে হয়। পরে পাকিস্তানি ক্রিকেট বোর্ড তার ইনজুরির প্রকৃতি নিয়ে তদন্ত করে তাকে অভিযোগ হতে অব্যহতি দেয়। যদিও পরবর্তীকালে তৎকালীন পাকিস্তানি অধিনায়ক ইনজামাম-উল-হক এবং কোচ বব উলমারের সাথে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় তিনি ২০০৫ সালের শুরুতে অস্ট্রেলিয়া সফর শেষে বিতর্কের জন্য দল থেকে আবার বাদ পড়েন।

তারপর ২০০৫ সালের শেষ দিকে পাকিস্তান দলে শোয়েবের প্রত্যাবর্তন হয়। একই বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন টেস্টের হোম সিরিজে তিনি চমৎকার বোলিং করেন। কার্যকরী স্লোয়ার ডেলিভেরির বল ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের ভীষণ সমসস্যায় ফেলে এবং তিনি মরা পিচে ১৭ উইকেট লাভ করেন। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের আগেই শোয়েব ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে দল থেকে ছিটকে পড়েন। একই বছর ইংল্যান্ডের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজে ফিরে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স করলেও কিছুদিনের মধ্যেই তিনি আরেক সতীর্থ মোহাম্মাদ আসিফ এর সাথে ড্রাগ টেষ্টে পজিটিভ হন। ফলে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

২৯ অক্টোবর ২০০৭ সালে ১৩ ম্যাচ নিষিদ্ধ থাকার পর শোয়েব আবার ক্রিকেটে ফিরে আসেন। এসেই লাহোরে ওডিআই সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৪৩ রানে ৪ উইকেট তুলে নেন। কিন্তু ২০০৭ সালে টি ২০ বিশ্বকাপের আগে তিনি তার সতীর্থ মোহাম্মাদ আসিফ কে ব্যাট দিয়ে আঘাত করে স্কোয়াড থেকে পুনরায় বাদ পড়েন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে ভারত সফরে তাকে ১৬ সদেস্যর দলে রাখা হয়। ২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপে তিনি তার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন। একজন দুর্দান্ত বোলারের পরিচয় থাকলেও তার ক্যারিয়ার ছিল বিতর্কিত। অবৈধ ড্রাগ গ্রহণ, অবৈধ বোলিং অ্যাকশন, সতীর্থের সাথে হাতাহাতি করার জন্য তিনি বারবার বিতর্কিত হয়েছেন।

/এনএএস


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply