আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ আহত ১৫

|

স্টাফ রিপোর্টার, পটুয়াখালী:

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় দলীয় প্রার্থী বাছাইকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাংবাদিকসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। যাদের মধ্যে পাচজনকে গুরুতর অবস্থায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে (শেবাচিম) পাঠানো হয়েছে।

বাউফল পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের লক্ষ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগ কর্তৃক ডাকা বিশেষ বর্ধিত সভায় সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে এক নেতার বক্তব্য দেয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে।

বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সুব্রত কুমার বিশ্বাস জানান, গুরুতর আহত বগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান মাহামুদ (৩৫), মো. জসিম (৩৪), মিজান মোল্লা (৪০), সুমন (৩০) ও মো. আশ্রাফকে (২৮) বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে হাসান মাহামুদ ও জসিমের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এছাড়া বাউফল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অহিদুজ্জামান ডিউককেও প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বলে জানান সুব্রত কুমার।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৩১ জানুয়ারি বাউফল পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে দলীয় মনোনয়নের জন্য মেয়র প্রার্থী বাছাইয়ের লক্ষ্যে বিশেষ বর্ধিত সভার আয়োজন করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটায় স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ স ম ফিরোজের সভাপতিত্বে ওই সভা
শুরু হয়। এক পর্যায়ে আসম ফিরোজের ভাতিজা ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত চন্দ্রদ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান বহিস্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক ওরফে আলকাচ মোল্লা বক্তব্য শুরু করেন। ঠিক সেই মুহূর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি বক্তব্য দেওয়ার কে? আপনাকে তো দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বহিষ্কার করা হয়েছে।

তখন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম ফারুকের অনুসারীরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেবকে গালাগাল করেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চেয়ার নিক্ষেপ শুরু হয়। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ কর্মী সৌমিক (২২), মো. শামীম (২৮), আতিকুর রহমান (৩০) ও কালাইয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজান মোল্লার (৪২) নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জনের একটি দল আবদুল মোতালেবের ছেলে বগা ইউপির চেয়ারম্যান হাসান মাহামুদকে টেনেহিঁচরে দলীয় কার্যালয় থেকে বাহিরে নিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে।

এ অবস্থা দেখে হাসানকে রক্ষা করতে তাঁর নেতা-কর্মীরা এগিয়ে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে হাসান মাহামুদ (৩৫), মো. জসিম (৪০) মো. ইসমাইল হোসেন (৩৫), সুমন (৩০), মো. ইমরান (১৯), মিজান মোল্লা (৪২), জগদীশসহ (৩৮) দুই পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন। এক পর্যায়ে বাউফল থানা পুলিশ আহত কয়েকজনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার ব্যবস্থা করে।

এদিকে সংঘর্ষের ওই দৃশ্য ধারণ করতে গেলে সাংবাদিক অহিদুজ্জামানকে মারধর করে আহত করা হয় ও যুগান্তরের সাংবাদিক জিএম মশিউর রহমানের মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে সভা শেষ না করেই আবদুল মোতালেব হাওলাদার সভাস্থল ত্যাগ করেন।

এ ব্যপারে সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদার জানান, ঘটনার সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর সাহেব আমার মুঠোফোনে ফোন দিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিতে চান। তাই আমি আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃত নেতা আলকাচ মোল্লাকে বলি, আপনি তো বহিস্কৃত নেতা। আপনার বক্তব্য দেওয়ার প্রয়োজন নাই। আর
এতেই বিএনপি ও জাতীয় পার্টি থেকে আসা আরেক নেতা ইব্রাহিম ফারুকের অনুসারীরা বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে আমাকে গালাগাল করে। আমার ছেলেসহ আমার নেতাকর্মীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এর জন্য সাংসদ আ স ম ফিরোজ সাহেব দায়ী।

তবে এ ব্যপারে জানার জন্য সাংসদ আ স ম ফিরোজের মুঠোফোনে কল করলে তিনি ধরেননি। অপরদিকে ইব্রাহিম ফারুককে ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।

বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আল মামুন জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।

/এডব্লিউ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply