নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহতের ঘটনায় পলাতক আসামিকে ১৯ ঘন্টাও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। আসামিকে দিয়ে গাড়ি চালানোয় সে কৌশলে গাড়ি খাদে ফেলে নিজে পালিয়ে যায়। এতে দুই এসআইয়ের মৃত্যু ঘটলেও পালিয়ে যায় আসামি। গত সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় এখনও আসামি পলাতক আছে বলে নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, আসামি এখনও পলাতক। আসামির কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ইয়াবা পানিতে পড়ে যাওয়ায় কিছু গলে গেছে, বাকিগুলো উদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে, সোমবার সন্ধ্যায় দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা আহত দুই এসআইকে উদ্ধার করে সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় আরও এক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আহত হয়েছেন। আহত এএসআইকে মুমূর্ষু অবস্থায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে পাঠানো হয়। নিহতরা হলেন ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার মুনসুরাবাদ গ্রামের কাজী নুরুল ইসলামের ছেলে কাজী সালেহ আহম্মেদ ও গোপালগঞ্জের চরভাটপাড়া গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে এসএম শরীফুল ইসলাম। তারা সোনারগাঁও থানায় কর্মরত ছিলেন।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গোপন সূত্রে খবর ছিল টেকনাফ থেকে ৫০ হাজার ইয়াবার একটি চালান আসছে। এ খবর পেয়ে সোনারগাঁওয়ের মেঘনা টোল প্লাজা এলাকায় তল্লাশি চৌকি বসায় পুলিশ। এ সময় আসামির গাড়িকে সিগন্যাল দিলে এক কনস্টেবলকে আহত করে সেটি পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে।
পরে পুলিশের আরেকটি টিম ধাওয়া করে আসামি আলমগীর হোসেনকে গাড়ি এবং ৪২ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর আসামিকে নিয়ে তারা সরাসরি জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে চলে আসে। এ সময় আসামিই গাড়ি চালাচ্ছিল।
এসপি অফিসে সংবাদ সম্মেলনের পর এবার থানার ফেরার পথে আসামিকে নিয়ে থানায় রওনা দেন দুই এসআই ও এক এএসআই। তবে, তাদের তিনজনের কেউই গাড়ি চালাতে জানতেন না। ফলে আসামিকে দিয়েই গাড়ি চালানো হয়। আসামি গাড়ি চালিয়ে সোনারগাঁওয়ের দত্তপাড়া এলাকায় এলে গাড়ি থেকে কৌশলে লাফিয়ে পড়ে গাড়িটি খাদে ফেলে পালিয়ে যায়। এতে গাড়িতে থাকা দুই এসআই মারা যান ও এএসআই গুরুতর আহত হন।
সোনারগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এসএম শফিকুল ইসলাম জানান, নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে একটি প্রেস ব্রিফিং শেষে সোনারগাঁও থানায় কর্মরত এসআই কাজী সালেহ আহম্মেদ, শরিফুল ইসলাম ও এএসআই রফিকুল ইসলাম মাইক্রোবাস যোগে থানায় ফিরছিলেন। পথে সোনারগাঁওয়ের দত্তপাড়া এলাকায় তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি খাদে পড়ে যায়। এ সময় স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কাজী সালেহ আহম্মেদ ও শরিফুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন দায়িত্বরত চিকিৎসক।
প্রত্যক্ষদর্শী টমটম চালক মোক্তার হোসেন জানান, সন্ধ্যা পৌনে ৭ টার দিকে দত্তপাড়া বাদশা গ্যারেজের একটু সামনে একটি প্রাইভেটকার দ্রুত গতিতে এসে পুকুরে পড়ে যায়। গাড়িটি মহাসড়ক থেকে সোনারগাঁও থানার দিকে যাচ্ছিল। গাড়িটি পুকুরে মুহূর্তের মধ্যে পানিতে তলিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা ও সোনারগাঁও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পুকুর থেকে পুলিশের তিন সদস্যকে উদ্ধার করে আমার টমটম যোগে হাসপাতালে নেয়। হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
/এসএইচ
Leave a reply