দুই হাত দুই পা কিছুই নেই। এরপরও কারও কাছে হাত না পেতে করছেন ফার্মেসী ব্যবসা, দিচ্ছেন চিকিৎসা সেবা। স্ত্রীর কোলে চড়েই সারেন প্রাত্যাহিক সব কাজ। যেখানে অনেক সুস্থ মানুষ বেছে নেয় ভিক্ষাবৃত্তি, আর ঠুনকো সব অজুহাতে ভেঙে যায় সংসার সেখানে ৪ হাত-পা হীন জব্বার পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করছেন, আর স্ত্রী হেলেনা বেগম দিন রাত স্বামীর হাত-পা হয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান সময়ের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এই দম্পত্তি।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের বাজারেই ফার্মেসী ব্যবসা পল্লী চিকিৎসক মো. জব্বার হাওলাদারের। এই জব্বার হাওলাদারের দুই হাত এবং দুই পা নেই। দড়ি দিয়ে বাহুর সাথে কলম বেধে ঔষধের নাম লিখেন, লিখেন রোগীর রোগের বিবরণ। চলা ফেরা করেন স্ত্রী হেলেনা বেগমের কোলে চড়ে।
এক সময়ে টিউশনি ও ফার্মেসীর দোকানে কর্মচারীর চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন জব্বার হাওলাদার। তখন আর ১০ টি মানুষের মতো স্বাভাবিক ছিল তার জীবন। পায়ে আঘাত পেয়েছিলেন, সেখান থেকে ১৯৮৫ সালে প্রথম গ্যাংগ্রিন রোগ ধরা পরে। সেখান থেকে বাম পা, পরে ডান পা, এরপরে দুই হাতে গ্যাংগ্রিন ছড়িয়ে পরে। অসংখ্যবার চিকিৎসকের কাছে গিয়ে আর অন্তত ১১ বার সার্জারীর মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠেন তিনি, কিন্ত কেটে বাদ দিতে হয় কনুইয়ের ওপর থেকে দুই হাত এবং কোমরের নিচ থেকে দুই পা।
এর পরে এক কথায় জীবন যুদ্ধে নামতে হয় তাকে। সুস্থ থাকা অবস্থায় পল্লী চিকিৎসকের (এমএলএফ) কোর্স সম্পন্ন করেছিলেন। আর যে ফার্মেসীতে কর্মচারী ছিলেন তার মালিক অসুস্থ হয়ে পড়লে ফার্মেসীর লাইসেন্স তাকে দিয়ে দেন। এই ফার্মেসী লাইসেন্স আর নিজের এমএলএফ করা জ্ঞান নিয়ে বাড়ির অদূরে শিমুল বাজারে দেন ফার্মেসী। নাম রাখেন আলামিন ফার্মেসী।
প্রতিদিন সকাল ৮টায় স্ত্রীর সহায়তায় বাজারে আসেন থাকেন ১২ টা পর্যন্ত, এরপরে আবার আসেন বিকেল ৪ টায় থাকেন রাত ৮টা পর্যন্ত। জব্বার বলেন, সামান্য চিকিৎসা সেবা দিই, ঔষধ বিক্রি করি, তাই দিয়ে জীবিকা চলে যায়। স্ত্রীর কথায় বললেন, সে ছাড়া আমি তো অচল। খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে সব কিছুই করে দেয় সে। সহনশীল ধৈর্যশীল এক নারী সে।
স্ত্রী হেলেনা বেগমও মেনে নিয়েছেন নিয়তি। স্বামী সন্তানদের নিয়ে আল্লাহ যেভাবে রাখছেন সেভাবেই থাকতে হবে। স্বামীর প্রকৃতির ডাক থেকে শুরু করে খাওয়া দাওয়া গোসল সব নিজ হাতে করান হাসিমুখেই।
এলাকাবাসী জানান, জব্বারের ভিক্ষা করে খাওয়ার কথা ছিল, সেটা না করে তিনি কর্ম করে খাচ্ছেন। এখান থেকে উপজেলা সদর জেলা সদর বেশ দূরে। ছোট খাটো রোগে জব্বার ডাক্তারের কাছে আসেন তারা, সুস্থও হন। তার জন্য বিশেষ সহায়তার ব্যবস্থা করার দাবিও জানান তারা।
ব্যক্তিজীবনে জব্বার হাওলাদার ৩ মেয়ে ১ ছেলের পিতা। ২ মেয়েকে ইতিমধ্যে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে ক্লাস টেনে পড়ছে আর ছোট মেয়ে ক্লাস ওয়ানে।
/এনএএস
Leave a reply