গ্যালাতাসারাই এবং তুরস্কের ফুটবল কিংবদন্তি ফুটবলার হাকান সুকুরকে ফুটবল মাঠে তার কীর্তির জন্যই সবাই মনে রাখবে। কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে দ্রুততম গোলের কীর্তির এক সময়কার মালিকের যে এখন পরিবারের খরচ মেটাতে উবার চালাতে হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, সে কথা হয়তো অনেকেরই অজানা। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের বিরোধিতা করায় নিজ দেশ থেকে নির্বাসিত হয়েছেন এক সময়ের ইউরোপ মাতানো এই ফুটবলার।
ইন্টার মিলান ও পার্মার হয়ে সিরি আ’তে দারুণ পারফর্ম করে ইংলিশ ক্লাব ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সেও বেশ কিছুদিন খেলেন সুকুর। ইউরোপ মাতানোর পর নিজ দেশের ক্লাব গ্যালাতারাসাইয়ে পরিণত হন ক্লাব লেজেন্ডে। ২০০৮ সালে সেই ক্লাব থেকেই বুটজোড়া তুলে রাখার পর কিছুদিন রাজনীতি করেছেন তুরস্কের হয়ে ১১২ ম্যাচে ৫১ গোল করা হাকান সুকুর। আর সেই রাজনীতি করাই কাল হয়েছে তার জন্য।
২০১১ সালে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টিতে যোগ দিয়ে ইস্তাম্বুলের একজন আইনপ্রণেতাও হন সুকুর। কিন্তু এর বছর দুয়েক পর এরদোগানের পার্টি ত্যাগ করেন তিনি, স্বাধীনভাবে রাজনীতি করবেন বলে। এরপর থেকেই রাজনৈতিক নানা সমস্যায় জড়িয়ে পড়তে থাকেন সাবেক এই কিংবদন্তি ফুটবলার। শেষমেশ, ২০১৫ সালে রাজনীতি থেকে ইস্তফা দেন সুকুর। তার আরও বছর দুয়েক পর পরিবার সমেত নিজ দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। ২০২০ সালে জার্মান সংবাদ মাধ্যম ওয়েল্ট অ্যাম সনট্যাং’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে হাকান সুকুর জানান, ব্যর্থ এক সামরিক অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। তাই দেশ না ছেড়ে আর কোনো উপায়ও ছিল না তার সামনে।
কীভাবে এরদোগানের কারণে পরিবার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি, তা ব্যাখ্যা করে হাকান সুকুর বলেন, আমার হারানোর আর কিছু বাকি নেই। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, কাজ করার অধিকার- আমার থেকে সব কেড়ে নেয়া হয়েছে। যে সামরিক অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে, সেখানে আমার ভূমিকা কী ছিল তা কেউই পরিষ্কার করে বলতে পারেনি আমাকে। অবৈধ কিছুই করিনি আমি। দেশের জন্য সর্বোচ্চটাই দিয়ে এসেছি সব সময়। আমি কোনো প্রতারক বা সন্ত্রাসী নই। এরদোগান সরকারের শত্রু হতে পারি, তবে তুর্কি জাতির শত্রু আমি নই। নিজ দেশকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। অথচ সেখানেই জীবনের ওপর হুমকি পেতে হয়েছে। আমার স্ত্রীর দোকানে চালানো হয়েছে হামলা। শিশুদের হেনস্তা হতে হয়েছে। আমার বাবাকে জেলে ঢোকানো হয়েছে। আর আমাদের সকল সম্পত্তি করা হয়েছে বাজেয়াপ্ত।
হাকান সুকুর বলেন, এসব ঘটনার পর আমি যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসি। ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি ক্যাফে চালিয়েছিলাম কিছুদিন। কিন্তু সন্দেহজনক মানুষদের আনাগোনা শুরু হয় ওখানে। এখন তাই আমি উবারে গাড়ি চালাই আর বই বিক্রি করি।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে দ্য সান’এ প্রকাশিত খবরেও বলা হয়, সে সময়ও যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি চালান বিশ্বকাপ ফুটবলের দ্রুততম গোলের এক সময়ের মালিক হাকান সুকুর।
Leave a reply