পা দিয়ে লিখে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া তামান্নাকে প্রধানমন্ত্রীর ফোন

|

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর:

এক পায়ে লিখে জেএসসি, এসএসসি’র পরে এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পাওয়া তামান্নাকে ফোন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তামান্নার সাথে কথা বলেছেন শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানাও।

সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় পৃথক দুটি হোয়াটসঅ্যাপ মোবাইল নাম্বার থেকে দুই বোন কথা বলেন তামান্নার সাথে। প্রধানমন্ত্রী তার স্বপ্ন পূরণে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তখন তামান্নাকে ‘বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে’ একটা আবেদন করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। ওই ট্রাস্টের মাধ্যমে তাকে সব সহযোগিতা দেবেন বলেও জানান তিনি।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া আলীপুরের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পী দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে বড় তামান্না আক্তার নূরা। তামান্না যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। গত রোববার প্রকাশিত
ফলাফলে এসএসসির মতো এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি।

এর আগে, ২০১৯ সালে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া জনাব আলী খান মাধ্যমিক
বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন তামান্না। একই ফল করেছিলেন পিএসসি ও জেএসসিতেও। তার বাবা রওশন আলী ঝিকরগাছা উপজেলার ছোট পৌদাউলিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসার
(নন এমপিও) শিক্ষক। মা খাদিজা পারভীন গৃহিণী। তামান্নার ছোট বোন মুমতাহিনা রশ্মি ষষ্ঠ শ্রেণিতে
পড়ে। ভাই মুহিবুল্লাহ তাজ প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।

সোমবার ভালোবাসা দিবসে তার জীবনে ঘটে যায় ভিন্ন ঘটনা। সন্ধ্যার দিকে মায়ের সাথে হাসপাতালে
ছিলেন তামান্না। সে সময় হঠাৎ হোয়াটসঅ্যাপে ফোন। ফোন রিসিভ করতেই তামান্নার ফোনের ওপাশ
থেকে এক নারী বলে উঠলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছিলাম। আমি কি তামান্নার সঙ্গে
কথা বলছি? ফোনের ওপাশের কণ্ঠস্বর শুনে তামান্নার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী
তাকে অভিনন্দন দিচ্ছেন!

এ সময় মুখে আর কথা বলতে পারছিলেন না তামান্না। আবেগের চাপ সামলাতে না পেরে কেঁদেই ফেললেন তিনি। সে কান্নার সাক্ষী গোটা পরিবার। একপর্যায়ে কান্না থামাতে বলেন শেখ হাসিনা। কান্না থামিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সালাম দেন তামান্না। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা এবং তার স্বপ্ন পূরণে প্রধানমন্ত্রীকে পাশে চান।

তামান্নার সঙ্গে টানা চার মিনিটের কথোপোকথনে প্রধানমন্ত্রী তামান্নাকে সাহস হারাতে নিষেধ করেন। সাহস আর মনোবল থাকলে তামান্না অন্য উচ্চতায় পৌঁছাতে পারবে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তামান্নার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে ফোন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা। ফোন রিসিভ করতেই তামান্নার ফোনের ওপাশের নারী বলেন, আমি কি তামান্না নূরার সঙ্গে কথা বলছি? শেখ রেহানা বলেন, টানা ভালো রেজাল্ট করায় তোমাকে অভিনন্দন। তোমার সংগ্রামের কথা শুনেছি। তুমি খুব সাহসী। তুমি এগিয়ে যাও। আমরা দুই বোন বেঁচে থাকা পর্যন্ত তোমার সহযোগিতা করে যাব। যারা সাহস রেখে চলে তারা কখনো হেরে যায় না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে পেরে দারুণ খুশি তামান্না। বলেন, প্রথমে দুইজনের সঙ্গে কথা বলতেই ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। প্রবল মধুর আবেগে কাঁপছিল আমার ভেতরটা। মনে হচ্ছে আমার জীবনে সৃষ্টি হয়েছে ইতিহাস। সেই অনুভূতি তো আপনাদের বুঝাতে পারব না। এতোটাই আনন্দিত হয়েছিলাম যে, হাসতে পারিনি, কেঁদে ফেলেছিলাম। প্রধানমন্ত্রীকে আমার জীবনের গল্প শোনাতে চেয়েছিলাম। আজ তিনি আমাকে নিয়মিত ভালোভাবে পড়াশোনা এবং নিজের যত্ন নিতে বলেছেন।

এ বিষয়ে তামান্নার বাবা রওশন আলী বলেন, গত ২৪ জানুয়ারি যশোরের জেলা প্রশাসকের পরামর্শে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর চিঠি লিখেছেন তামান্না নূরা। তামান্নার লেখা চিঠি প্রথমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, তারপর যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে তামান্নার আঁকা বিভিন্ন ছবিও দেওয়া হয় ওই চিঠির সঙ্গে। পরম করুণাময় আল্লাহর অসীম দয়ায় তামান্নার সঙ্গে আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা কথা বলেছেন। আশা করি সবার দোয়ায় তামান্নার স্বপ্ন পূরণ হবে।

জেডআই/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply