বাংলাদেশে সক্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে একটি সুস্পষ্ট নীতিমালার অধীনে আনতে চাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এ লক্ষ্যে ফেসবুক, ইউটিউব ও হোয়াটসঅ্যাপ জাতীয় মাধ্যমগুলোর জন্য নতুন প্রবিধান (Regulation) করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। প্রবিধান বাস্তবায়ন হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ব্যাপারে কিছু বিধিনিষেধ আসতে পারে।
ইতোমধ্যে বিটিআরসি তাদের ওয়েবসাইটে প্রবিধানটির একটি খসড়া প্রকাশ করেছে। যদিও যোগাযোগমাধ্যমগুলো সবসময়ই বলে আসছে প্রেরক এবং প্রাপক ছাড়া পাঠানো বার্তাগুলো আর কাউকে দেখায় না তারা, তবে বিটিআরসি খসড়ায় বলছে, বিধি লঙ্ঘনকারী কোনো বার্তা আদান-প্রদান করলে আদালত ও বিটিআরসির নির্দেশ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট বার্তা প্রথম যিনি দিয়েছিলেন, তাকে শনাক্ত করে দিতে হবে। তারা জানিয়েছে, মাধ্যমগুলোকে অবশ্যই বাংলাদেশে কর্মী নিয়োগ করতে হবে, সশরীর যোগাযোগের ঠিকানা রাখতে হবে, অভিযোগ নেয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে ও নির্দিষ্ট সময়ে তা নিষ্পত্তি করতে হবে। আদালত ও বিটিআরসি নির্দেশ দিলে নির্দিষ্ট কনটেন্ট বা আধেয় ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সরিয়ে নিতে হবে।
এছাড়া বিটিআরসি যদি মনে করে মাধ্যমগুলোতে প্রচারিত কোনো কনটেন্ট এখনই সরিয়ে ফেলা উচিত, তবে তারা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরাসরি সে নির্দেশ দিতে পারবে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানগুলো কনটেন্ট সরাবে কিনা সেটি তাদের নিজেদের পলেসি দিয়ে ঠিক করে। প্রস্তাবিত প্রবিধান কার্যকর হলে মাধ্যমগুলো বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো কনটেন্ট সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হবে। এবং এর জন্য কোনো শুনানির প্রয়োজন হবে না।
বিটিআরসির পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশন অনুযায়ীই তারা খসড়াটি করেছে। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে, আরও বিশ্লেষণ করেই খসড়াটি কার্যকর করা হবে।
নতুন প্রবিধানমালা সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ডিজিটাল মাধ্যম এবং সব ওভার দ্য টপ (ওটিটি) মাধ্যমের জন্য প্রযোজ্য হবে। বিটিআরসি বলছে, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে হুমকির মুখে ফেলে এবং সরকারের গোপনীয়তা ভঙ্গ করে, এমন কিছু প্রচার করা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধ, জাতির জনক, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে এবং ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত লাগে, এমন কিছু প্রচারে বিরত থাকতে হবে। পর্নোগ্রাফি, গোপনীয়তা লঙ্ঘনকারী এবং অবমাননা ও মানহানিকর আধেয় প্রচার করা যাবে না। এছাড়া, কোনো নিষিদ্ধ কনটেন্ট ব্যবহারকারী মুছে ফেললেও তদন্তের জন্য তা ১৮০ দিন সংরক্ষণ করতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে বাংলাদেশে বসবাস করবেন এমন তিনজন কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে বলা হয়েছে। তারা ব্যবহারকারীদের অভিযোগ গ্রহণ করবেন এবং তা ২০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করবেন। এছাড়া নিয়োগ দিতে বলা হয়েছে বাংলাদেশে বসবাসকারী একজন কমপ্লায়েন্স অফিসারকে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক সমন্বয়ের জন্য একজন প্রতিনিধি রাখার কথাও বলা হয়েছে।
/এডব্লিউ
Leave a reply