সাত বছর ধরে গৃহযুদ্ধে জর্জরিত সিরিয়ায় নতুন করে আগ্রাসী রূপে অবতীর্ণ যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় শনিবার ভোরে, অন্তত ৩০ দফা বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে রাজধানী দামেস্ক, হোমস আর হামা।
রাসায়নিক হামলার জেরে, সিরিয়ায় সমন্বিত অভিযান শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য আর ফ্রান্স। সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের রাসায়নিক অস্ত্রের মজুদ লক্ষ্য করে চলছে হামলা।
এরপরই হোয়াইট হাউজ থেকে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে, সিরিয়ায় সমন্বিত অভিযানের নির্দেশ দেয়ার কথা জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাসায়নিক অস্ত্রের মজুদ ধ্বংসে আসাদ সরকারকে স্পষ্ট বার্তা দিতে এই হামলা।
ট্রাম্প বলেন, “যেকোনো মূল্যে রাসায়নিক অস্ত্রের উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র বিলোপের আশ্বাস দিয়েও তা রক্ষা করতে পারেননি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। বর্তমান পরিস্থিতির জন্য রাশিয়া ও ইরান সমানভাবে দায়ী।”
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস বলেন “আসাদ সরকারকে স্পষ্ট বার্তা দিতেই এই আঘাত। সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্রের যে মজুদ রয়েছে, তা ধ্বংসে সুনির্দিষ্ট কিছু জায়গায় মিসাইল ফেলা হয়েছে। আশা করছি, এবার সতর্ক হবেন সিরীয় প্রেসিডেন্ট।”
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এই অভিযানে শামিল হয় যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেন, “সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ কিংবা আসাদ সরকারের পতন ঘটানো আমাদের লক্ষ্য নয়। আসাদের রাসায়নিক অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংসে, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বিফলে যাওয়ায় এ অভিযান। শিশুসহ শত শত বেসামরিক মানুষের ওপর যে বর্বরতা চালিয়েছে আসাদ সরকার, তা চলতে দেয়া যায় না।”
দামেস্কে হামলার নিন্দা জানিয়েছে আসাদ মিত্র রাশিয়া। ক্ষুব্ধ মস্কোর অভিযোগ, পূর্ব ঘৌতাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিদ্রোহীদের হঠিয়ে যখন সিরিয়ায় শান্তি ফেরানোর পথে আসাদ সরকার, তখন এমন হামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রুশ পররাষ্ট্র মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন “একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র যখন দীর্ঘদিনের সন্ত্রাসের রাজত্ব থেকে মুক্তির লড়াইয়ে জয়ের পথে, তখনই খোদ রাজধানীতে বহিঃশক্তির আক্রমণ হলো দেশটিতে। আরব বসন্ত, আইএস জঙ্গিদের ত্রাস, আর সর্বশেষ মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্রের শিকার সিরিয়া। যখন শান্তি ফিরছে, তখন নতুন করে পরিস্থিতি অশান্ত করে তুলছে যুক্তরাষ্ট্র।”
অবশ্য তিন দেশের সম্মিলিত হামলার পাল্টা জবাব দিচ্ছে সিরীয় বিমান বাহিনী। এ পর্যন্ত ১৩টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করার কথা জানিয়েছে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা। এদিকে, মার্কিন হামলার প্রতিবাদে শনিবার সকালেই দামেস্কের রাজপথে নামেন লাখো আসাদ সমর্থক। বিক্ষোভ হয়েছে হোয়াইট হাউজের সামনেও।
Leave a reply