ফেসবুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অপহরণের পর মুক্তিপণ না পেয়ে হত্যা করা হয় মিঠুকে

|

ইনসেটে নিহত মিঠু হোসেন।

স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী:

নরসিংদীর মনোহরদীতে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অপহরণের পর হত্যা করা হয় সিরাজগঞ্জের স্নাতক প্রথম বষের শিক্ষার্থী ও অনলাইনে কাপড় ব্যবসায়ী মো. মিঠু হোসেনকে। এই ঘটনায় এক নারী ও তার স্বামীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করার পর হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ।

আজ বোরবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান নরসিংদীর পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম। এর আগে গত বৃহস্পতিবার মনোহরদীর একটি খড়ের গাদার পাশ থেকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে মিঠু হোসেন (২৪) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, সিরাজগঞ্জ সদর থানার রায়পুর রেলওয়ে কলোনীর মুসলিম উদ্দিনের ছেলে স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মিঠু হোসেন অনলাইনে শাড়ি কাপড়ের ব্যবসা করতেন। ফেসবুকে পরিচয় হওয়া দুই বন্ধুর ভরসায় নরসিংদীর বাবুরহাটের শাড়ির সম্পর্কে ধারণা নিতে গত বুধবার নরসিংদীতে যায় মিঠু হোসেন। নরসিংদী পৌঁছে বুধবার সন্ধ্যায় পরিবারের সাথে ফোনে কথা বলেন মিঠু। এরপর ওই রাতে মিঠুর ফোন থেকে কল করে কয়েকজন জানান তারা মিঠুকে অপহরণ করেছেন। এ সময় পরিবারের কাছে ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে তারা। রাতে মিঠুর ফোন থেকে পরিবারের সদস্যদের সাথে ৫০ বারের মতো কথা বলার পর ফোনটি বন্ধ করে দেয়া হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে মনোহরদী উপজেলার একদুয়ারিয়া ইউনিয়নের হুগলিয়াপাড়ার একটি খড়ের গাদার পাশ থেকে অজ্ঞাত একজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সিরাজগঞ্জ থেকে মনোহরদী থানায় গিয়ে ছবি দেখে মরদেহটি মিঠু হোসেনের বলে শনাক্ত করেন পরিবারের সদস্যরা। পরে এই হত্যার রহস্য উদঘাটনে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মাঠে নামে নরসিংদী জেলা পুলিশ।

রোববার সংবাদ সম্মেলনে নরসিংদীর পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম জানান, মিঠু হোসেনকে অপহরণ ও হত্যায় জড়িত সন্দেহে রোববার ভোরে গাজীপুরের শ্রীপুর ও নরসিংদীর শিবপুর থেকে শাহনাজ আক্তার পপি ও তার স্বামী আব্দুল বাতেন ও কাকন খান নামের তিনজনকে গ্রেফতার করার পর খুনের রহস্য উদঘাটন হয়। পপির সাথে ফোনে কথা বলা ও ফেসবুকের মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অপহরণের পর মুক্তিপণ না দেয়ায় হত্যা শেষে খড়ের গাদায় মিঠু হোসেনের মরদেহ গুম করা হয় বলে পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে জানায় গ্রেফতার হওয়া পপি। এই ঘটনায় জড়িত তার স্বামীসহ সহযোগী প্রতারক চক্র। এই চক্রের মূল হোতা হানিফ নামে আরও একজন বলে জানায় শাহনাজ আক্তার পপি।

কাজী আশরাফুল আজীম বলেন, গাজীপুরের শ্রীপুরের মিঠালু এলাকার শাহনাজ আক্তার পপি ও তার স্বামী আব্দুল বাতেন, শিবপুরের দুলালপুরের আশুটিয়া এলাকার কাকন খানসহ গড়ে উঠেছে একটি প্রতারক চক্র। এই চক্রের দলনেতা পপি নিজের ছদ্মনাম ব্যবহার করে সুন্দরী মেয়েদের ছবি ব্যবহার করে একাধিক ফেসবুক আইডি খুলেন। পরে এসব আইডির মাধ্যমে টার্গেট করা বিভিন্ন লোকদের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে বন্ধুত্ব ও প্রেমের ফাঁদে ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় দেখা করার প্রস্তাব দেয়া হয়। পপিসহ এই চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে কেউ এগিয়ে আসলে তাকে আটক করে মারধর ও মুক্তিপণ দাবি করে তারা। এই অপরাধের ধারাবাহিকতায় ফেসবুকে বন্ধুত্ব, চ্যাটিং ও ফোনে কথা বলার পর পপির প্রেমের ফাঁদে পড়ে মিঠু হোসেন সিরাজগঞ্জ থেকে নরসিংদীতে গেলে পপির সহযোগী প্রতারক চক্রের মাধ্যমে তাকে অপহরণ করে শিবপুরের আশুটিয়ার অজ্ঞাত স্থানে আটক রাখা হয়। পরে ফোনে তাদের দাবি অনুযায়ী পরিবারের সদস্যরা মুক্তিপণ না দেয়ায় সহযোগী প্রতারক চক্রের সদস্যদের হাতে শিবপুরের আশুটিয়া এলাকায় খুন হয় মিঠু। পরে তার মরদেহ গুম করা হয় মনোহরদীর একদুয়ারিয়া ইউনিয়নের হুগলিয়াপাড়ার একটি খড়ের গাদার পাশে।

এ ঘটনায় গ্রেফতার শাহনাজ আক্তার পপি, তার স্বামী আব্দুল বাতেন ও কাকন খান নামে প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করার পর বাকী সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

জেডআই/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply