যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে ইউক্রেনের প্রতিরোধ

|

ইউক্রেনের নড়বড়ে প্রতিরোধ কাঠামো যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে ফেলতে পারে রুশ সেনাবহর। কিয়েভ অভিমুখে ৪০ মাইল দীর্ঘ ট্যাংক বহরের ছবি প্রকাশের পরই এমন উদ্বেগ পশ্চিমা বিশ্বের। বিবিসি বলছে, একইসাথে খারকিভ-খেরসন শহরেও চালানো হচ্ছে সর্বাত্মক হামলা। ১১শর বেশি স্থাপনায় বোমা হামলা চালানোর দাবি রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের। এরই মধ্যে বোমা হামলা ঠেকাতে নো ফ্লাই জোন চেয়েছে ইউক্রেন। ক্লাস্টার বোমা মেরে নির্বিচারে সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ দেশটির।

রুশ হামলায় রীতিমতো নরককুণ্ডে পরিণত হয়েছে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর খারকিভ। সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকেই চলছে দফায়-দফায় হামলা। সাইরেন শুনে নিরাপদ আশ্রয়স্থলে যাওয়ার আগেই লোকালয়ে ছোঁড়া হচ্ছে গোলা-বারুদ।

এর মধ্যেই আতঙ্কের খবর দিয়েছে পর্যবেক্ষক সংস্থা ম্যাক্সার। কিয়েভ অভিমুখে ৪০ মাইল দীর্ঘ ট্যাংক বহরের ছবি প্রকাশ করেছে তারা। যা নাড়িয়ে দিয়েছে প্রতিরোধ গড়ে তোলা ইউক্রেনের মনোবল। ক্রেমলিনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে অভিযানের সবশেষ খুঁটিনাটিও। রাশিয়া প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল ইগোর কোনাশেনকভ বলেন, রুশ সেনাবাহিনী এক হাজার ১৪৬টি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। সে তালিকায় রয়েছে কমান্ড পোস্ট, কমিউনিকেশন সেন্টার, বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এবং রাডার স্টেশন। ৩১১টি ট্যাংক, ৪২টি যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার, ৫১টি মাল্টিপল রকেট লঞ্চার, ১৪৭টি কামান এবং ২৬৩ ইউনিট বিশেষ সামরিক যান ধ্বংস করা হয়েছে।

রুশ বিমান বাহিনীর হামলা মোকাবেলায় নো ফ্লাই জোন ঘোষণার জোরালো দাবি তুলেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলদিমের জেলেনস্কি। প্রেসিডেন্ট বলেন, খারকিভে আকাশপথে গোলা ছুঁড়ছে রুশবহর। প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। যা স্পষ্টভাবে যুদ্ধাপরাধ। এর জন্য রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় নেয়া উচিৎ। এ পরিস্থিতিতে পশ্চিমা বিশ্বকে নো ফ্লাই জোন ঘোষণার আহ্বান জানান তিনি। তাদের যেকোনো যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারের চলাচল নিষিদ্ধ করারও আহ্বান তার।

রুশ সেনাবহরের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ওপর নিষিদ্ধ ঘোষিত ক্লাস্টার বোমা ছোড়ার অভিযোগ জানিয়েছে ইউক্রেনের কূটনীতিকরা। অবশ্য রাশিয়ার অভিযোগ, বিশ্ব দরবারের সহানুভূতি পেতে সাধারণ মানুষকে বর্ম হিসেবে ব্যবহার করছে জেলেনস্কি প্রশাসন। ট্যাংক বহরের সামনে ঠেলে দিচ্ছে বেসামরিক ইউক্রেনবাসীকে। এছাড়া, সেনা ঘাঁটিগুলোর মধ্যেও আশ্রয় দেয়া হচ্ছে নারী-শিশুদের।

তবে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ওকাসানা মারকারোভা বলেন, ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর রাশিয়া মিসাইল, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ছে। এমনকি ব্যবহার করেছে ক্লাস্টার বোমা, যা জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী পুরোপুরি নিষিদ্ধ। তাদের গণবিধ্বংসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ইউক্রেন।

এদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির জন্য অবিলম্বে মানবিক সহায়তা এবং জরুরি তহবিল গঠনের আহ্বান জাতিসংঘের। সংস্থাটির ত্রাণ বিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথ বলেন, প্রায় প্রতিদিনই ইউক্রেনে বেসামরিক প্রাণহানি-ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে প্রয়োজন জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা।

প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুসারে দেশটিতে ৪ শতাধিক হতাহতের ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া প্রাণভয়ে দেশটি থেকে পালিয়েছেন এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ।

/এডব্লিউ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply