রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ ঘোষিত ‘ভ্যাকুয়াম বোমা এবং ক্লাষ্টার বোমা’ ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে ইউক্রেন। জাতিসংঘে নিযুক্ত দেশটির বিশেষ প্রতিনিধি ওকাসানা মারকারোভা জানান, খারকিভে ছোঁড়া হয়েছে এসব গণবিধ্বংসী অস্ত্র; এর ফলে বিপুল প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি দেখছে তার দেশ। এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে, যুদ্ধাপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে পুতিন প্রশাসনকে জবাবদিহি করতে হবে, এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
কেবল সামরিক ঘাঁটি আর সীমান্তবর্তী তল্লাশি চৌকিগুলোই হামলার মূল টার্গেট বলে রাশিয়া বারবার দাবি করলেও সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দেশটির বিরুদ্ধে জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী নিষিদ্ধ ‘ভ্যাকুয়াম ও ক্লাস্টার বোমা’ ব্যবহারের অভিযোগ এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ওকাসানা মারকারোভা বলেন, ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর রাশিয়া মিসাইল, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ছে। এমনকি ব্যবহার করেছে ভ্যাকুয়াম বোমা, যা জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী পুরোপুরি নিষিদ্ধ। তাদের গণবিধ্বংসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ইউক্রেন। তাদের বোঝা উচিত, আমরা কোনোভাবেই আত্মসমর্পণ করবো না। কাউকে বলছি না, এসে ইউক্রেনের জন্য যুদ্ধ করুক। কিন্তু, অর্থ-অস্ত্র সহায়তা না পেলে রাশিয়াকে মোকাবেলা করা কঠিন।
কিন্তু প্রশ্ন আসতে পারে, কী এই ভ্যাকুয়াম বোমা? জানা যায়, বাতাস থেকে অক্সিজেন শুষে নিতে সক্ষম এই বোমা আসলে থার্মোবেরিক অস্ত্র। যাকে ‘অ্যারোসল বোমা’ও ডাকা হয়। সাধারণ বিস্ফোরকের তুলনায় এর তরঙ্গ অনেক বেশি দীর্ঘ এবং স্থায়ীত্বসম্পন্ন। এতে রয়েছে বোমা নিক্ষেপের জন্য ভিন্ন দুটি চার্জার পয়েন্ট। সেই সাথে, এই বোমার ক্ষয়ক্ষতিও মারাত্মক। বিশ্লেষকদের দাবি, বোমাটির তরঙ্গ চাপে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে মানবশরীর। এমনকি হয়ে যেতে পারে নিশ্চিহ্নও। এছাড়া, তরঙ্গ যতটা এলাকায় ছড়াবে, বিলীন হবে লোকালয়। বোমাটি নিক্ষেপের পর বিস্ফোরিত না হলেও কাটছে না বিপদ। দীর্ঘদিন থাকে এর তেজষ্ক্রিয়তার প্রভাব।
ইউক্রেনের অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে, রাশিয়াকে যুদ্ধাপরাধের দায় নিতে হবে, এমন হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি বলেন, নিষিদ্ধ বোমা ব্যবহারের এখনও বিশ্বাসযোগ্য কোনো তথ্য পায়নি যুক্তরাষ্ট্র। তবে, এ বিষয়ক প্রতিবেদনগুলো রাখা হয়েছে পর্যবেক্ষণে। কিয়েভের অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মুখোমুখি হতে হবে মস্কোকে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্য অনুসারে, ভ্যাকুয়াম বোমা বা থার্মোবেরিক অস্ত্রের ব্যবহার এটাই প্রথম নয়। ভিয়েতনাম যুদ্ধে প্রথমবার এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া, চেচেন যুদ্ধ এবং সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ চলাকালেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে উঠেছে একই অভিযোগ।
আরও পড়ুন: সামরিক সক্ষমতায় ইউক্রেনের চেয়ে কতটা এগিয়ে রুশ বাহিনী?
আরও পড়ুন: কতটা পারমাণবিক অস্ত্র আছে রাশিয়ার কাছে?
Leave a reply