আরও একটি চেরোনোবিল বিপর্যয় দেখার অপেক্ষায় কি রয়েছে বিশ্ব? ইউরোপের সর্ববৃহৎ পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র যাপোরিঝিয়ায় রাশিয়ার হামলার পরই উঠে এসেছে এই আলোচনা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলদিমের জেলেনস্কি দাবি করেছেন, পরমাণু বিপর্যয়ে ইউরোপের বিনাশ কারোই কাম্য নয়। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা বলছে, অভিযান পর্যবেক্ষণে রাখলেও যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে তাদেরও হাত-পা বাঁধা।
ইউরোপের সর্ববৃহৎ পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র যাপোরিঝিয়া লক্ষ্য করে রাতের অন্ধকারে ছোড়া হয় গুচ্ছ-গুচ্ছ রুশ মিসাইল। চুল্লির আশপাশেই গিয়ে পড়ে সেসব মিসাইল। কেন্দ্রের ভেতরেই জ্বলছিল আগুন। রোমহর্ষক সেসব দৃশ্য়ের ভিডিও দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে গোটা আন্তর্জাতিক মহল। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নিজেই বললেন, তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ স্তরে না থাকলেও তা গোটা ইউরোপ ধ্বংস করতে যথেষ্ট। ভোলদেমির জেলেনস্কি বলেন, একবার পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটিতে বিস্ফোরণ হলে, গোটা ইউরোপের ইতি ঘটবে। কারণ, সেখানে মিসাইল হামলায় জ্বলছে আগুন। থার্মাল ক্যামেরার মাধ্যমে চুল্লিগুলো নিরিখ করেই চালানো হচ্ছে হামলা। কিন্তু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পারমাণবিক বিপর্যয়ে ইউরোপের বিনাশ কোনোভাবেই কাম্য নয়।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএ’র উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোকে টার্গেটের মাধ্যমে আসলে ইউরোপকে ব্ল্যাকমেইল করছে রাশিয়া। সংস্থাটির মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রসি বলেন, ইউক্রেনের পরমাণু সমৃদ্ধ এলাকাগুলোকে টার্গেট করেই এগোচ্ছে রাশিয়া। যাপোরিঝিয়া কেন্দ্রেও রয়েছে ১৫টি চুল্লি, যা থেকে দেশটির ৫০ ভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়। তার মানে স্পষ্ট, একই সাথে জেলেনস্কি সরকার এবং ইউরোপকে হুমকি দিচ্ছে রাশিয়া। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সরাসরি সহযোগিতা দেয়ার সুযোগ কম। তবু, সম্ভাব্য সব উপায় পরখ করে দেখছে আইএইএ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু পরমাণু চুল্লি নয়, এর সাথে কেন্দ্রটিতে বসানো ডিজেল পরিচালিত জেনারেটরও বড় হুমকি। ছোট্ট ভুলের কারণে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে পারে ইউরোপ। কার্নেগি সেন্টারের পরমাণু নীতিমালা কর্মসূচির সহ পরিচালক জেমস অ্যাক্টন বলেন, সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয়টি হলো পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে আগুন জ্বলছে। চুল্লিগুলোর সংস্কার কাজ চলায় ডিজেল পরিচালিত জেনারেটরের মাধ্যমে সেসব চলছে। সেখানে দমকলকর্মীরা পৌঁছাতেও পারছেন না। রুশ সেনাবহরকে বলবো, পারমাণবিক এলাকাটি এড়িয়ে চলুন। নতুবা, দ্বিতীয় চেরোনোবিল বিপর্যয় দেখবে বিশ্ব।
আরও পড়ুন: ‘পারমাণবিক বিপর্যয় ঘটার আগেই রাশিয়াকে থামান!’
এনারহোদার শহরে অবস্থিত কেন্দ্রটি ৫,৭০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। ২০১৭ সাল থেকে দুটি ইউনিটের সংস্কার কাজ শুরু হয় এখানে, যেগুলো কার্যক্ষম হলে আগামী ১০ বছর পর্যন্ত প্রদান করবে সেবা। ক্রাইমিয়া অভিযানের সময়ও, বারবার কেন্দ্রটি দখলের চেষ্টা করা হয়।
আরও পড়ুন: রুশ হামলায় জ্বলছে ইউরোপের সর্ববৃহৎ পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র
Leave a reply